আশুলিয়া ও গাজীপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো শ্রমিকসংগঠন গড়ে উঠেছে। কেউ শ্রমিক অধিকারের নামে, আবার কেউ শ্রমিক পুনর্বাসনের নামে এসব দোকান খুলে বসেছেন। শ্রমিক নামধারী ৩৬ জন নেতার সংগঠনের পাশাপাশি গাজীপুরে রয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিকসংগঠন। আর সাভার-আশুলিয়ায়ও রয়েছে অনুরূপ সংখ্যক শ্রমিকসংগঠন। যখন কোনো গার্মেন্টসে অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন এসব ভুঁইফোঁড় শ্রমিকসংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যে আসেন। তাদের আসল চেহারা উন্মোচন হয়ে যায়।
সম্প্রতি গার্মেন্টসে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তার মূলে ছিল ৩৬ শ্রমিক নামধারী নেতাদের উসকানি। আর এই ৩৬ শ্রমিকনেতার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তিন সহস্রাধিক ভুঁইফোঁড় শ্রমিকসংগঠনের নেতারা। অনেকটা ৩৬ নেতার সংগঠনের অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করছে তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সাপ্লাইও দিয়ে থাকে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা শ্রমিকসংগঠনগুলো। বর্তমানে গার্মেন্টসে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত এসব সংগঠনের সাত নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর ভুঁইফোঁড় শ্রমিকসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী এলাকা থেকে পালিয়ে যান। অনেকে তাদের সংগঠনের সাইনবোর্ডও খুলে নিয়ে গেছে। এসব সংগঠন সম্পর্কে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শ্রমিকসংগঠনগুলো দোকান খুলে বসেছে ব্যবসা করতে। তারা চাঁদাবাজি করে। ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
কোনো কিছু হলে তারা আন্দোলন করে। আবার এক শ্রেণির গার্মেন্টস মালিকও তাদের ব্যবহার করছে। দেশের ৩ হাজারের বেশি গার্মেন্টস আছে। এরমধ্যে অনেক ছোট ছোট গার্মেন্টস আছে। যারা গার্মেন্টস কারখানা খুলেছে অবৈধ ব্যবসা করতে। ব্যবসার নামে ঋণ নিয়ে পরে প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষণা করে তারা। এভাবে দেশের সম্পদ লুট করে তারা। গতকালও মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকায় কয়েকটি গার্মেন্টসে শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেনি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নতুন মহাপরিচালক পুলিশের অতিরিক্ত আইজি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, গার্মেন্টস কারখানায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে র্যাব তত্পর রয়েছে। র্যাব-পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। যেই নাশকতা করুক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের স্থান গার্মেন্টস খাতে কোনো বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলায় জড়িত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর ভুঁইফোড় গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের নেতারা পালিয়ে গেছেন।
শিল্প অঞ্চল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান বলেন, গতকাল গাজীপুরে শতভাগ গার্মেন্টসে শান্তিপূর্ণ কাজ করেছেন শ্রমিকরা। আশুলিয়ায় ২০/২৫টি গার্মেন্টস খুলেনি। আজ বুধবার সাভার-আশুলিয়ার শতভাগ গার্মেন্টস খোলা থাকবে। তবে যারা গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করার অপতত্পরতায় লিপ্ত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।