পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপনের মূল ভিত্তি হিসেবে আমাদের সমাজের সবচেয়ে প্রচলিত, গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত মাধ্যম হলো ‘বিয়ে’। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিকে বিয়ের অন্যতম প্রধান ধাপ বলা চলে। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি, ক্যারিয়ার প্ল্যান এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবশেষে যখন নারী বা পুরুষ বিশেষ করে নারীদের বয়স ২৫ পেরিয়ে যায় কিংবা ছুঁই ছুঁই তখনই শুনতে হয়, বয়স তো হলো! বিয়ে কেন করছ না! এই বয়সে বিয়ে না হলে ভালো জীবনসঙ্গী মিলবে তো! আরও নানান কথা।
বিয়ে আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটিই একমাত্র মাধ্যম নয়। যখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে বিয়েকে স্থান দেওয়া হয় সমস্যা শুরু হয় তখনই। ছেলেদের থেকে হাজার গুণ বেশি সময় মেয়েদের শুনতে হয় বিয়ে কেন করছ না!
বিয়ে না হওয়াটা যেন বিরাট অপরাধ। বিশেষ করে অবিবাহিত নারীর প্রতি সমাজের আচরণ অনেকটাই নেতিবাচক। অনেক ক্ষেত্রে নারীর পেশাকে এর জন্য দায়ী করা হয়। একজন মানুষের অনেক কারণেই বিয়ে না হতে পারে। ছাত্রী অবস্থায় কোনো মেয়ের বিয়ে না হলে ধরে নেওয়া হয় তার আর বিয়ে হবে না। নয়তো নিশ্চয়ই তার মধ্যে কোনো সমস্যা আছে। এগুলো আমাদের দেশের গতানুগতিক ধ্যান- ধারণা। অনেককে দেখা গেছে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে ভালো কোনো চাকরিতে মন দিয়েছেন। আর আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনতে হয় মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না কেন। এ বিষয়গুলো মানুষের মনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানসিক অশান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব শুনে অনেকে হয়তো বিরক্ত হয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা কিংবা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন
এমন সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য কিছু অভিনব ধারণা নিয়ে এক বিশেষ প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। বিয়ে বিষয়ক প্রশ্নের বেশ কিছু উত্তর নিয়ে প্রতিবেদনে চমৎকার কিছু আইডিয়া দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নকর্তা ও স্থান বুঝে কিন্তু উত্তরগুলো দিতে হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যদি কোনো বন্ধুর কাছ থেকে বিয়ের প্রশ্ন পান তখন তাকে হাসতে হাসতে বলে দিন, গত ২০ বছর ধরেই তো মনের মতো একজনকে খুঁজছি, পাচ্ছি কই! আমার হয়ে কাজটা একটু করে দাও না। এটাও বলা যায়, কেন আমার স্বাধীন আর ঝামেলাহীন জীবন দেখে কি তোমার হিংসে হচ্ছে?
যদি পাশের বাড়ির কোনো আন্টি বা দূর সম্পর্কের আত্মীয় জিজ্ঞেস করে তাহলে একটু ভেবে সুন্দর করে বলুন, আসলেই আন্টি, আপনারাই তো আমার অভিভাবক, কত ভাবেন আমাকে নিয়ে। আমি তো বিয়ের বিরুদ্ধে নই, দেখা যাক আপনারাও দেখেন।
এভাবে অনেক উত্তর হয়তো নিজের মতো করে দিতে পারেন। কিন্তু কাউকে মনে আঘাত দিয়ে কোনো জবাব দেওয়া অনুচিত। রাগ করেও কাউকে জবাব দেওয়া যাবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত রাখা। চাপ সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
এ প্রসঙ্গে মানসিক চাপ মোকাবেলায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মত হলো, বিয়ে না হওয়ার কারণে সমাজে যে নেতিবাচক আচরণের শিকার হতে হয়, তার কারণে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে। অনেকেই ওই ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করেন। এতে তিনি হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন, একপর্যায়ে হতাশও হয়ে পড়তে পারেন। কারণ বিয়ে নিয়ে অনেকের মনে অনেক পরিকল্পনা কিংবা সাজানো স্বপ্ন থাকতে পারে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হলে এমনিতেই ব্যক্তি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।
বিয়ে নিয়ে অনেকেরই ক্যারিয়ারের শুরুতে ভাবনা নাই থাকতে পারে। হয়তো কেউ পরিকল্পনা করেছেন নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বিয়ে নয়। সব মানুষই তার নিজের নিয়মে, নিজের গতিতে চলে। এখানে অন্যের হস্তক্ষেপ করা একদমই ঠিক কাজ নয়। নিজস্ব কিছু স্বপ্ন সবারই থাকে। বিয়ের ক্ষেত্রে আজকাল বয়স কোনো বাধাই নয়। বাধা আমাদের মনে। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। সে তার নিজের গতিতে ঠিকই কক্ষপথ খুঁজে নেবে। অন্যের মানসিক অশান্তির কারণ হওয়া উচিত নয়।