রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১
The Daily Ittefaq

বন্ধ হওয়ার পথে ফরিদপুর নদীবন্দর

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:৫০

পদ্মা নদীতে নাব্য সংকটের কারণে ডুবোচরে নৌযান আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ফরিদপুর নদীবন্দর ব্যবহারকারীরা। অনতিবিলম্বে এ নৌবন্দরে প্রবেশের চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং না করা হলে বন্দরটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে জাহাজ কম আসায় রাজস্বও কমতে শুরু করেছে বন্দরের। যদিও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।

মেসার্স মুজিবুর রহমানের প্রতিনিধি মো. আলাউদ্দিন শেখ, ঠিকাদার মো. ওয়াহিদসহ ব্যবসায়ীরা জানান, ফরিদপুরের একমাত্র নদীবন্দরটি দিয়ে চাল, গম, সিমেন্ট, সার, বালু, সিলেকশন বালিসহ প্রায় ৪০ ধরনের পণ্যসামগ্রী আনা হয়। চলতি শুকনো মৌসুমের শুরুতেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় বড় বড় জাহাজগুলো বন্দর পর্যন্ত আসতে পারছে না। এতে সংকটে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

নুর ফার্মা জাহাজের মাস্টার মো. সাদেক মোল্লা, তানিসা জাহাজের মাস্টার মো. মিন্টু, জাহাজ চালক মো. ইকরাম জামানসহ বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজের নাবিক-শ্রমিকরা জানান, একটি জাহাজ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পানির ১০ থেকে ১২ ফুট গভীরতা প্রয়োজন হলেও এই চ্যানেলের কোথাও কোথাও তা চার থেকে ছয় ফুটে নেমে এসেছে, ফলে বড় জাহাজগুলো ঘাটে আসতে পারছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। দিনের পর দিন নদীর মধ্যে জাহাজ নোঙর করে রাখতে হচ্ছে, এতে কয়েক গুণ বেশি সময় লাগছে। তারা আরো জানান, ঘাটের কয়েক কিলোমিটার আগেই আটকে যাচ্ছে জাহাজগুলো, তখন ছোট ছোট ট্রলার দিয়ে মাল আনা নেওয়া করা হচ্ছে, যাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ।

এই বন্দরে পণ্য খালাসে কাজ করেন সহস্রাধিক শ্রমিক। শ্রমিকসর্দার মো. রঘু সর্দার, ট্রাকচালক মহিদসহ শ্রমিকরা জানান, বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে পথে বসতে হবে তাদের। এছাড়া জাহাজগুলো ঘাটে ভিড়তে না পারায় চালকসহ অন্যদেরও ব্যাবসায়িকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন তারা। 

ঘাটসংশ্লিষ্ট ডিক্রির চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির জানান, এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবিলম্বে ড্রেজিং কাজ শুরু না হলে কিছু দিনের মধ্যেই বন্দর অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তারা জানান, এরই মধ্যে রাজস্বও কমতে শুরু করেছে বন্দরটির।

যদিও দ্রততম সময়ের মধ্যে এ অবস্থা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহ্সান তালুকদার। তিনি জানান, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। শিগিগরই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, খাদ্য পণ্যের পাশাপাশি এ বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী আনা হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা যায়।

উল্লেখ্য, পদ্মা নদীর ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাটকে ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট ‘ফরিদপুর নদী বন্দর’ ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদপুর নদীবন্দর হিসেবে ইজারা প্রদান করা হয়। চলতি বছরে ঘাটটি ইজারা না দেওয়া হলেও খাস কালেকশনের ভিত্তিতে রাজস্ব আদায় করছে বিআইডব্লিওটিএ।

ইত্তেফাক/এসটিএম