ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা আজ শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। গত কয়েকটি ভূমিকম্পের মতো এবারের ভূমিকম্পেরও উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৫।
বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এই ঝুঁকির মধ্যেই সকাল সকাল কম্পনের কারণে আতঙ্কিত সবাই। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাইরে ছুটেছেন। কিন্তু অনেকেরই জানা থাকে না, ভূমিকম্প হলে আসলে ঠিক কি করতে হবে।
চলুন জেনে নেই ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে,-
১. ভূকম্পন অনুভূত হলে শান্ত থাকুন। যদি ভবনের নিচ তলায় থাকেন, তাহলে দ্রুত বাইরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসুন।
২. যদি ভবনের ওপর তলায় থাকেন, তাহলে কক্ষের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন। একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন।
৩. ভূমিকম্পের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নিন। অতঃপর টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং তা এমনভাবে ধরে থাকুন যেন মাথার ওপর থেকে সরে না যায়। এ ছাড়া শক্ত দরজার চৌকাঠের নিচে ও পিলারের পাশে আশ্রয় নিতে পারেন।
৪. উঁচু বাড়ির জানালা, বারান্দা বা ছাদ থেকে লাফ দেবেন না।
৫. ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির পর ফের ঝাঁকুনি হতে পারে। সুতরাং একবার বাইরে বেরিয়ে এলে নিরাপদ অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত ভবনে প্রবেশ করবেন না।
৬. রান্নাঘরে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসুন। সম্ভব হলে বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মেইন সুইচ বন্ধ করুন।
৭. মোবাইল বা ফোন ব্যবহারের সুযোগ থাকলে উদ্ধারকারীদের আপনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।
৮. দুর্ঘটনার সময় লিফট ব্যবহার করবেন না।
৯. যদি কোনো বিধ্বস্ত ভবনে আটকা পড়েন এবং আপনার ডাক উদ্ধারকারীরা শুনতে না পায়, তাহলে বাঁশি বাজিয়ে অথবা হাতুড়ি বা শক্ত কোনো কিছু দিয়ে দেয়ালে বা ফ্লোরে জোরে জোরে আঘাত করে উদ্ধারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
১০. ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকুন।
১১. গাড়িতে থাকলে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভেতরেই থাকুন।
১২. ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন এবং উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
ভূমিকম্প কী ও কেন হয়
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশ বিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন।
গবেষকদের মতে, বিশ্বে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যা আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী ও ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়- ভূ পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হলেও এর মধ্যেই ঘটে যেতে পারে বিরাট অঘটন। যেমনটি সম্প্রতি ঘটেছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের ঘটনায়।