বছর শেষেও পকেট সেই গড়ের মাঠ-এ কথা চলতি বছর আরো প্রাসঙ্গিক। মূল্যস্ফীতির চাপে অতিষ্ঠ জনজীবন। মধ্যবিত্ত তাও বছর শেষে কিছুটা হলেও পরিকল্পনার কথা ভাবতে পারে। নিম্ন আয়ের মানুষের সেই ভাবনা থাকা কঠিন। সংসারের খরচ বাড়ছে। প্রত্যাশা বাড়ছে। জীবন এগুচ্ছে। কিন্তু সাশ্রয়ের পথ বেরুচ্ছে না। সাশ্রয় কি এতটাই কঠিন? খুব একটা না। চাহিদা পূরণ করেও সাশ্রয় করা যায়। নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে পুরো পরিবার মিলে পরিকল্পনাগুলো করতে পারেন। তাতে পরিবারের সঙ্গেও সময় কাটানো হবে আর সাশ্রয়ের সৃজনশীল পথও বের হবে।
শুরুতেই বাজেট
প্রথমেই সংসারের সম্ভাব্য আয়, পরিবারের সদস্যদের রুচি ও চাহিদা জেনে নিন। সবার সঙ্গে কথা বলে খরচের একটি খসড়া তৈরি করুন। মাসের শুরুতেই প্রতিটি খাতের বরাদ্দ করা অর্থ আলাদা করুন। মনে রাখতে হবে, প্রতিমাসে খরচ এক রকম হয় না। যে খাতের অর্থ ব্যয় হল না, তা জমা করে রাখুন। মাস ও ঋতুভেদে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। পরিবারের সদস্যদের শুধু মাছ, মাংস নয়, শাকসবজি খাওয়ার প্রতিও আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করুন। বাজার-সদাই কেনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যমের খোঁজ নিন। মাধ্যমগুলোতে খরচ কেমন এবং দাম কেমন জানার চেষ্টা করুন। আপনার পরিকল্পনাগত নানা খরচের বিষয়ে মিতব্যয়ী হতে মাসের শেষেই আস্তে আস্তে পরিকল্পনা মিটিং ডাকুন। নতুন বছরের আগেই তা শুরু হোক।
সাশ্রয়ী হতে হবে
চিকিত্সার জন্য বরাদ্দ অর্থ আগেই আলাদা করুন। কারণ জরুরি প্রয়োজনে ধার করা বা বাড়তি ঝামেলা পোহানোর বিষয়টি ভাবতেই হবে। ঘরে যদি অসুস্থ রোগী বা বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য থাকেন, তবে তাদের জন্য আলাদা খাত করুন। শিশুদের সম্ভাব্য রোগের কথা ভেবেও আগে থেকেই অর্থ রাখুন। সিজনাল অসুস্থতায় অনেক সময় খরচ হয়ে যায়। অনেকের প্রস্তুতি থাকে না বলে ধার করতে গিয়েও হিসেব এলোমেলো হয়ে যায়। এদিকেও মিতব্যয়ী হতে হবে। হুটহাটের শখ পূরণেও ভাবনা জরুরি। আমরা অনেকেই অনেক সময় অনলাইনে বা দোকানে কিছু দেখে পছন্দ হওয়া মাত্রই কিনে ফেলি। এমনটি না করে প্রয়োজনীয় খাতেই ব্যয় করুন। টেলিফোন, মোবাইল ফোন, বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি ব্যবহারে সচেতন হোন। এভাবে অপচয় হ্রাস পাবে। মাসের বাজারে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে কিনুন। কেননা একসঙ্গে জিনিস কিনলে অর্থ সাশ্রয় হয়। আতিথেয়তার জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখুন। এসব বিষয়ে পরিকল্পনা থাকলে বাড়তি খরচ হবে কম।
ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখুন
প্রতিমাসেই অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে ফেলুন ভবিষ্যতের জন্য। কারণ ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও আর্থিক সচ্ছলতার জন্য সবারই কিছু সঞ্চয় থাকা প্রয়োজন। প্রথমে খুব বেশি সঞ্চয় করতে না পারলেও অল্প অল্প করে সঞ্চয় করুন। ধীরে ধীরে আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দিন। এ ব্যাপারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজ নিন। কোন ব্যাংক বা সঞ্চয় প্রতিষ্ঠানে আপনার জমানো অর্থ বাড়বে খোঁজ নিন।
মৌসুমি ব্যয়
বার্ষিক বাজেট তৈরি করলে বাজেটে মৌসুমি ব্যয় খাত নামে খরচের একটি খাত রাখুন। স্কুলের পোশাক, নতুন জুতা কিংবা হঠাত্ চলে আসা দাওয়াতের খরচ সেই খাত থেকে ব্যয় করুন। এসব ব্যয় পরিকল্পনার বাইরে থাকে। চিকিত্সার হিসেব আলাদা। মৌসুমি ব্যয় অত প্রয়োজনীয় না হলেও খরচ করতে হয়। কোন সময়ে খরচ হতে পারে আন্দাজ করে পকেটে টাকা রাখার পরিকল্পনা রাখুন।
অযথা খরচ বন্ধ করুন
ভ্রমণ, কোথাও দাওয়াতে যাওয়ার জন্য আলাদা বাজেট রাখুন। আবার টাকা অযথা খরচ বন্ধ করুন। তাহলে কিছুটা আরাম পাবেন। অনেক আজেবাজে খরচ আমরা করি। বিভিন্ন খাতের পরিকল্পনা থাকলে মিতব্যয়ী হওয়া যায়। তবে সতর্ক হতে হবে।
বড় কেনাকাটায় সময় নিন
বাড়িতে দামি কিছু কিনতে হবে। ধরুন কোনো ইলেকট্রিক পণ্য বা আসবাব। তাই বলে হুট করে কিনে ফেলবেন? আগে ভালোমতো নিজের মার্কেট রিসার্চ করুন। সবার সঙ্গে আলাপ করুন, বাজেট বাছাই করুন। বছরের শুরুতেই এ বিষয়ে আনুমানিক ধারণা ও লিস্টিং করুন।
ঋণ শোধ করুন
অনেক সময়েই বেতনের টাকা পুরোটা শেষ হয়ে গেলে আমরা বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন কারও থেকে ধার নিই। যেখান থেকেই ধার করুন না কেন মাসের প্রথমেই চেষ্টা করুন সেটা শোধ করার। পুরোনো বছরের ধারগুলো একে একে শোধ করার বিষয়ে আলাদা পরিকল্পনা রেখেই এগোন।
বাজেট বাস্তবায়ন
বাজেট তৈরি করা সহজ হলেও তা মেনে চলা বেশ কষ্টকর। তাই বাজেট বাস্তবায়নে কিছুটা শক্ত হোন। বাজেট যদি মেনে চলতে পারেন তবে পরের মাসে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের পুরস্কৃত করুন। পরের বাজেটে নিজের পছন্দের কোনো জিনিস ঢুকিয়ে দিন। বছরের শুরুতে বাজেটের সাধারণ খসড়া নিয়ে হোক আলাপ। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও বাদ যাবে কেন? নতুন বছর হোক সুন্দর।