বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

যুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্ব রাজনীতি

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৩

যুদ্ধবিগ্রহ ও দাঙ্গাহাঙ্গামার খবরে বিশ্ব রাজনীতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ঘোলাটে হচ্ছে পরিস্থিতি। ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ। ভূরাজনীতিতে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরম আকার ধারণ করেছে। ‘২০২৩-এ ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা সালতামামি আকারে তুলে ধরা হলো-

গণতন্ত্রহীনতা
২০১৬ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণাসহ ট্রাম্পের একাধিক বিতর্কিত ঘটনা বিশ্ব রাজনীতির মোড় পাল্টে দিয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় অবনতি হয়েছে গণতান্ত্রিক পরিবেশের। থাইল্যান্ডে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। ভারত সরকারের নানা নিবর্তনমূলক আইনকে কেন্দ্র করেও সমালোচকরা চুপ নেই। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্ব গণতন্ত্র চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে।

জনসংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যায় ভারত
এক শতক ধরে সর্বাধিক জনসংখ্যার রেকর্ড ছিল চীনের। ‘২৩-এ সেই রেকর্ড ভেঙেছে ভারত। চীনকে ছাপিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে ভারত। এখন ভারতে ৩৪ হাজার ১৪০ কোটি ৮০ লাখ লোক বসবাস করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শতাব্দীর মধ্যভাগেই চীনের জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। চীনা নাগরিকদের গড় বয়স হবে ৩৯-৫১ বছর। এর বিপরীতে ভারতীয়দের গড় বয়স হবে ৩৯ বছর।

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দ্বন্দ্ব
নাগোর্নো-কারাবাখ দখলকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের দ্বন্দ্ব বাড়ছেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই এই দ্বন্দ্ব পূর্ব ইউরোপে অস্থিরতা সৃষ্টি করে আসছে। আর্মেনীয়রা যুগ-যুগ ধরে নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজানের বিরোধিতা করে এসেছে। ১৯৯১ সালে আর্মেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং একে কেন্দ্র করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এই দুই দেশ। ১৯৯৪ সালে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সম্পাদিত হয় এবং আর্মেনীয়রা স্বাধীনতা লাভ করে। সেই সঙ্গে কিছু ভূমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় আজারবাইজান। এরপর ২০২০ সালে ওই অঞ্চলকে ঘিরে আবারও যুদ্ধ শুরু হয়। এবারও যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়া মধ্যস্থতা করে। কিন্তু টেকেনি সেই চুক্তি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আজারবাইজান আবারও হামলা করে বসে। এবারের হামলায় আজারবাইজান নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে দখলে নেয়। প্রায় এক লাখ আর্মেনীয় পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর ২০২৪ সালেও এই যুদ্ধের রেশ থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পারস্পরিক বৈঠক করেন। এতে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অস্তিত্ব তাদের সম্পর্কে আবার ফাটল ধরায়। চলতি বছর জুনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন সফরে যান। তার সেই সফর ফলপ্রসূ হয়নি। এই সফরের পর চীনের ওপর নতুন করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকরা নিশ্চিতভাবেই বলছেন, বিশ্বের এই দুই পরাশক্তির সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব ২০২৪ সালেও থাকবে।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর প্রতিশোধস্বরূপ গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৫০৭। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী অন্তত এক লাখ বেসামরিক লোক শরণার্থী হয়েছেন। ২০২৩ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব এ ঘটনায় পুতিনকে দায়ী করতে থাকে এবং ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে থাকে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় ১০ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৬০ জনই শিশু। বর্তমানে ইউক্রেন নতুন যোদ্ধার সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত।

ইমরান খান গ্রেপ্তার ও নওয়াজ শরিফের ফিরে আসা
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ২০২২-২৩ সাল ছিল খুবই ঘটনাবহুল বছর। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। পরে তাকে তোশাখানা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হয়েই শাহবাজ শরিফ তার ভাই নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনেন। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে আবারও সামনে আসেন নওয়াজ। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ছিল।

ভারতে জি-২০ সম্মেলন
চলতি বছর ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি-২০ সম্মেলন আয়োজন করে। এতে মোট ৪৩ জন রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সম্মেলনে যোগ দেননি। সম্মেলনটি আয়োজন করে ভারত বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের গুরুত্বকে অনেক বাড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ইত্তেফাক/এসসি