শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সফটওয়্যার প্রকৌশল থেকে পোশাক উদ্যোক্তা আশিক খান

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৭

২০১২ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে তার ইচ্ছা জাগে সফটওয়্যার প্রকৌশল পড়ার। ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। পাশাপাশি নিজের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করেন আশিক খান।

ড্যাফোডিলে পড়ার সময় নিজের কিছু জমানো টাকা ও মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকার ইস্টার্ন প্লাজায় ছোট একটি অফিসে অ্যাডভার্ট লিমিটেডের কাজ শুরু করেন আশিক। তখন ছয়জন কর্মী ছিল তার প্রতিষ্ঠানে। ওয়েব ডিজাইন, ই-কমার্সের ওয়েবসাইট, গ্রাহক ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার সেবা দেওয়া হতো এই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৪০ জন কর্মী নিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় না। কাল হয়ে দাঁড়ায় করোনা। টাকাপয়সা আটকে যায়। বিকল্প ভাবতে হয় আশিককে।

আশিকের উদ্যোগগুলো নিয়ে বলতে গেলে যেতে হবে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৭ সালে স্নাতক হওয়ার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও ব্রিটিশ সংস্কৃতিবিষয়ক কোর্সের জন্য বৃত্তি পান আশিক। অক্সফোর্ডের কোর্স সম্পন্ন করে ২০১৮ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন আশিক। বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আশিক লক্ষ করেন, যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকগুলো খুব বেশি দামে বিক্রি হয়। অন্যদিকে পোশাক যারা বানান, তারা ন্যায্য মজুরিটুকুও পান না। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান আশিক। 

২০২০ সালে আশিক ভাবলেন নিজে সরাসরি তৈরি পোশাক বিক্রি করবেন। আশিক কম দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করে পোশাক তৈরির পরিকল্পনা করেন। তবে এর পরেই আসে আশিকের ব্যবসায় দ্বিতীয় ধাক্কা। সব কিছু ভালোই চলছিল। হঠাত ব্লেজার সরবরাহের বড় একতা একটা অর্ডার পান আশিক। ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন পোশাকে। কিন্তু ব্লেজার নেওয়ার পর সেই প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে যায়। তবে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন তিনি। লাইভ শপিংয়ের দোকান চালু করেন। 

লাইভশপিং নামেই অনলাইনে ও বাংলামোটরের দোকানে পোশাক বিক্রি করতে থাকেন আশিক। এরপর ২০২১ সালে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে আরেকটি দোকান খোলেন। ২০২২ সালে মিরপুর ২ নম্বরে মিরপুর শপিং সেন্টারে বড় আকারে দোকান খোলা হয়। ২০২৩ সালে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং চট্টগ্রাম, উত্তরা ও সিলেটে চারটি দোকান চালু করেন আশিক। ওদিকে ফেসবুকে লাইভ শপিংয়ের পেজ তো আছেই। সেখানে ফলোয়ার ২০ লাখ। ২ লাখের বেশি নিবন্ধিত ক্রেতা।

এখন ২৭ বছর বয়সী আশিক খানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩০০ জন কর্মী কাজ করছেন আশিকের বেড়ে ওঠা যশোর শহরে। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। বাবা শফিকুর রহমান ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী, মা ফাতেমা রহমান, একজন নারী উদ্যোক্তা। 

ব্যবসা খাতে আরও তরুণ আসুক, এটাই চান আশিক খান। আশিকের পরিকল্পনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়া।

ইত্তেফাক/এএইচপি