রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু কর্মচারী, সহজ ডটকমের অসাধু কর্মকর্তা, সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের যোগসাজশে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করা হতো বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। চক্রটি বিভিন্ন কারসাজি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। আর ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে টিকিটপ্রতি দাম বেড়ে যায় ৩-৪ গুণ পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে সারাদেশে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম ও সেলিমসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ২৪৪টি আসনের টিকিট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকিট বিক্রির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির মূলহোতা মো. সেলিম (৫০), তার প্রধান সহযোগী মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), মো. হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), মো. শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩) ও মো. আব্দুর রহিম (৩২)।
তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), তার প্রধান সহযোগী মো. মোর্শেদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২) ও মো. জোবায়েরকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তমের নেতৃত্বে এ চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতো। গ্রেপ্তার সেলিম এবং উত্তমের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করত। এক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে ৪টি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। পরে সাধারণ যাত্রীদের কাছে এসব টিকিট দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি করতো।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানায়, এছাড়াও কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীদের টিকিট কাটার সময় এনআইডি সংগ্রহ করে রাখে এবং পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা প্রতিটি এনআইডি দিয়ে ৪টি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতো।
এছাড়াও রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী ও সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং সার্ভার রুম ও আইটি সদস্যদের সহযোগিতায় জনসাধারণের সংরক্ষিত এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতো বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানান, ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রতিটি টিকেট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করে। এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ আসামিদের এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।
কমান্ডার মঈন জানান, গ্রেপ্তার সেলিম দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ‘সেলিম সিন্ডিকেটে’র মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে ৭টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেছেন তিনি। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রমে লিপ্ত হয়।
সহজ লিমিটেড-এর চিফ অপারেটিং অফিসার সন্দীপ দেবনাথ বলেন, 'সম্প্রতি ঘটে যাওয়া টিকেট অব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত ঘটনাটি সম্পর্কে সহজ ডট কম অবগত। আমরা এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রশংসা করি। গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং গ্রাহকদের সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি ব্র্যান্ড হিসেবে এই ঘটনাটি আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। আমাদের লক্ষ্য ডিজিটাল টিকেটিং খাতে সর্বোত্তম পরিষেবা প্রদান করা এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো সদস্য এই ধরনের কার্যকলাপের সাথে জড়িত নয়। আমরা এই চলমান তদন্তের উপর পুরোপরি আস্থা রাখি এবং তদন্তে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান দেখতে চাই, পাশাপাশি আমাদের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বজায় রাখতে চাই।'