কারখানা নেই, নেই ট্যাক্স আইডিন্টেফিকেশন নম্বরও (টিআইএন)। তবু তারা শিল্পপতি। নেন নানা ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা। বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হয়ে তারা ভোট দিয়ে নেতাও নির্বাচন করতে চান। সারা বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও ভোটের সময় তারা জেগে ওঠেন। নিজেদের ভোট বিক্রি করা তাদের প্রধান কাজ। প্রতিবার এমনটি হলেও এবার তারা ফেঁসে যাচ্ছেন। খুঁজে খুঁজে এরকম ৪২৯টি কথিত গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের নাম বের করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে বলে জানা গেছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তাদের মতো নামসর্বস্ব কারখানামালিকদের কারণে পুরো খাতের বদনাম হচ্ছে। তারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নানা ধরনের জালিয়াতি করে বেড়ান। অনেক সময় বিজিএমইএ এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইউজার্স ডিক্লারেশনের কাগজপত্রসহ নানা ডক্যুমেন্ট সরবরাহ করে। বিভিন্ন জায়গায় কথিত এসব কারখানা মালিক বিজিএমইএর সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে নানা সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি নির্বাচনকে ঘিরে তাদের পরিচয় সামনে উঠে এসেছে। দৈনিক ইত্তেফাকের কাছে এসংক্রান্ত নথিপত্র রয়েছে।
আগামী ৯ মার্চ তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের তপসিল অনুযায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকায় থাকা কয়েক জনের ব্যাপারে সন্দেহ হলে পুরো বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে ৪২৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে টিআইএন আছে কি না, তা পরীক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ফোরাম প্যানেল। তারা ভোটার তালিকাকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে দাবি করেছে।
তাদের অভিযোগ, সদ্য প্রকাশিত প্রাথমিক ভোটার তালিকায় থাকা ৪২৯ জনের কর প্রদানের তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সংগঠনের নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর ঐ ভোটারদের নাম ও করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সংবলিত একটি তালিকাসহ আপত্তিপত্র দেওয়া হয়। ফোরাম প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদের সই করা ঐ আপত্তিপত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পুনরায় নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবিও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুই বছর মেয়াদি বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ গত এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কমিটির মেয়াদ দুই দফায় ছয় মাস করে এক বছর বৃদ্ধি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৯ মার্চে হতে যাচ্ছে বিজিএমইএর ২০২৪-২৬ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন।
নির্বাচন আপিল বোর্ডে দেওয়া এক আপত্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচনি বোর্ড। এই তালিকায় থাকা ভোটারদের তথ্য এনবিআরের ওয়েবসাইটের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে (তল্লাশি) দেখেছেন আপত্তিদাতা। এতে দেখা যায়, ভোটার তালিকায় ৪২৯ জন এমন ভোটার রয়েছেন, যাদের আয়কর প্রদানসংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নির্বাচন বোর্ড বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ১৯৯৪, বিজিএমইএর সংঘবিধি এবং নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। তাই একটি নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তর (এনবিআর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এদিকে গতকাল শনিবার ঐ সব ভুয়া ভোটারের বিষয়ে বিজিএমইএ নির্বাচনি আপিলাত ট্রাইব্যুনালে শুনানি হয়েছে। সেখানে বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরান তানভীরুর রহমান জানিয়েছেন, ভোটার তালিকাটি তৈরি করেছে বিজিএমইএ। এর পরও তালিকাটি নিয়ে তিনি কাজ করবেন বলে আপিলকারীদের জানিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বোর্ডের অন্য দুই সদস্য হলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শমী কায়সার এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি এ এস এম নাঈম।
অন্যদিকে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভীরুর রহমান। বাকি দুই সদস্য হলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি খায়রুল হুদা ও পরিচালক নিজামুদ্দিন রাজেশ।
ফোরাম প্যানেলের আপত্তির বিষয়ে নির্বাচনি বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলামিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে কিছু জানেন না উল্লেখ করে আপিল বোর্ড বিষয়টি দেখবে বলে জানান। তিনি বলেন, বিজিএমইএতে থাকা নথির ভিত্তিতে প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি আপিল বোর্ডের কাছে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন।