সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলোর টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। এসব ঘরের বেড়ার টিনও নষ্ট হয়ে গেছে। মাত্র কয়েকটি পরিবার টিনের চালের উপর পলেথিন দিয়ে ও ঘরের মেঝেতে সিমেন্টের বড় চারি বসিয়ে, বালতি, পাতিলের মধ্যে চালের পানি ফেলে এখনো রয়ে গেছেন। তবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় অধিকাংশ পরিবার অন্যত্রে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী লোকজন।
দেখা গেছে, বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল গ্রামের বস্তুল পুর্বপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বৃদ্ধা নারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ছেড়ে ঘরের সাথেই জোড়াতালি টিনের একটি ছাপড়া ঘর দিয়েছেন। তিনি ঘরের মেঝেতে কাঁদা মাটি দিয়ে লেপে সমান করার চেষ্টা করছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের মত এ ছাপড়া ঘরটিও জরাজীর্ণ।
মৃত আব্দুল্লাহ সরকারের স্ত্রী জফিরণ (৭০) দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকা যায়না। বৃষ্টির মৌসুম আসছে। সামান্য বৃষ্টি হলেও টিনের ফুটো দিয়ে মেঝেতে পানি পড়ে। তখন মেঝের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা থাকেনা। টিনের চালে পলেথিন দিয়ে রেখেছি। ঘরের মধ্যেও পলেথিন টাঙিয়েছি। বৃষ্টির পানি পলেথিনে জমা হয়। পরে চারির মধ্যের পানি বালতি দিয়ে তুলে ঘরের বাইরে ফেলে দেই। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরে এখন আর থাকা যায়না। আমার কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। বাধ্য হয়ে ঘরের সাথে ছোট ছাপড়া তুলে নিয়েছি বসবাসের জন্য।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ লতিফ বলেন, তাড়াশে আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পে ৪০০ পরিবার বসবাস করতেন। এখন অধিকাংশই ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় এসব প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। ফলে এখনো যারা রয়ে গেছেন তাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই।
বস্তুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের আজম আলী, ফাতেমা খাতুন, খায়রন নেছা, মরিয়ম খাতুন ও আদরী খাতুন বলেন, বস্তুল পুর্বপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮০ ঘরে হাতে গোনা ১৫টি পরিবার রয়েছেন। বাকিরা নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। ঘরের জানালা, দরজা, খাম, খুঁটি, মেঝে, চাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারিভাবে ঘরগুলো মেরামত করে দিলে সবাই ফিরে আসবেন। নয়ত কিছু দিনের মধ্যে বসতিশূন্য হয়ে পড়বে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো।
এদিকে বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল আশ্রয়ণ প্রকল্প ১ ও ২, বস্তুল আবাসন প্রকল্প, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রয়ণ প্রকল্প, কুমাল্লু আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া আবাসন প্রকল্প ১ ও ২ ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের চালের ওপর ও নিচে পলিথিন দিয়ে রেখেছেন সবাই। যাদের পলিথিন কেনার সামর্থ্য নেই, তারা বৃষ্টির পানি হাঁড়ি-পাতিলে ধরার চেষ্টা করছেন।
ভুক্তভোগী লোকজন বলেন, বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় তাদের সীমাহীন কষ্ট হয়। নিজেরা তো ভিজেই, পানিতে চাল, ডাল, কাপড়-চোপড় ভিজে যায়। এসব আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখানকার ছেলে-মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় ও খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই। নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার সমস্যাও প্রকট।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) খালিদ হাসান বলেন, সরকারি করাদ্দ না পাওয়া গেলে আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের মেরামত কাজ করা সম্ভব নয়। তবে মেরামতের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ- ৩ (তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে পর্যায়ক্রমে আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।