বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

সুন্দরবনে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে শাপলাপাতা মাছ

ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি বনবিভাগের

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮

বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের আশে পাশের বিভিন্ন নদ-নদীতে অবাধে ধরা হচ্ছে নিষিদ্ধ শাপলাপাতা মাছ। এ মাছ আবার সুন্দরবনের উপকূলীয় অন্যান্য অঞ্চলের মতো খুলনার দাকোপের বিভিন্ন হাট বাজারেও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই মাছ শিকার ও বিক্রি  নিষিদ্ধ তা জানেন না বলে দাবী করেছেন বিক্রেতারা। 

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অসাধু জেলেরা এ মাছ শিকার করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে শাপলাপাতা মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মাছটির আকৃতি শাপলা পাতার মতো হওয়ায় এটি শাপলা পাতা মাছ নামে পরিচিত। এছাড়া শাপলাপাতা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ষ্টিংরে ফিস। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) শাপলাপাতা মাছকে প্রায় বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির শাপলাপাতা থাকলেও বাংলাদেশে ৫৬ প্রজাতির শাপলাপাতা মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ প্রজাতি ভেদে ৮০০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী এই মাছ শিকার ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও সুন্দরবনের আশে পাশের বিভিন্ন নদ-নদীতে অসাধু জেলেরা ছোট বড় এ মাছ বড়শি দিয়ে শিকার করছেন। 

এছাড়া শাপলাপাতা মাছ সাগরের গভীরে বিচরণ করলেও বংশ বিস্তারের সময় মাছগুলো তীরের কাছাকাছি আসে। আর আটকে পড়ে জেলেদের জালে। এ মাছ আবার সুন্দরবনের উপকূলীয় অন্যান্য অঞ্চলের মতো দাকোপ উপজেলা সদর চালনা বৌমার গাছতলা মাছ বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। 

সমুদ্রবেষ্টিত অঞ্চলের মানুষের কাছে এই শাপলাপাতা মাছ খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। এছাড়া প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে মাছটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে ক্রেতারাও খুচরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে ক্রয়ে করছেন। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগের নীরব ভূমিকায় শিকার নিষিদ্ধ এ মাছের অবাধ বাজারজাত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নিষিদ্ধ শাপলাপাতা মাছ শিকার চলতে থাকলে এক সময় এ মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বিরাজমান।

চালনা বৌমার গাছতলা মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম শেখ জানান, খুলনার মাছের আড়ত থেকে ৫০০ কেজি পাইকারি দরে শাপলাপাতা মাছ কিনে এনে ৬০০ টাকা কেজি খুচরা বিক্রি করছেন। তবে এই মাছ ধরা বা বিক্রি নিষিদ্ধ তা তিনি জানেন না।

উপজেলার শ্রীনগর নব জাগ্রত যুব সংঘের সভাপতি সমাজসেবক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের আশে পাশের নদ-নদীতে দিনের পর দিন এভাবে নিধন চলতে থাকলে এক সময় এই শাপলাপাতা মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতার কারণেই এ মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে না। জৈববৈচিত্র রক্ষায় মারাত্মক ভূমিকা রাখা এই মাছের নিধন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, শাপলাপাতা মাছ একটি জন সম্পদ। এই জন সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্ব সকলেরই। জৈববৈচিত্র রক্ষায় এই মাছ সংরক্ষণের প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, শাপলাপাতা মাছ সারাদেশেই শিকার নিষিদ্ধ। এবিষয়ে প্রচার প্রচারণা করে জন সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া শাপলাপাতা মাছ শিকার বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। আর যে সব বন কর্মকর্তা এ কাজে সহযোগিতা করেন খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি