বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

খরস্রোতা ধরলা-বারোমাসিয়া এখন ফসলের মাঠ

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০০

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক সময়ের খরস্রোতা ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদনদী শুকিয়ে এখন সবুজ ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। এসব নদনদীর বুকে তীরবর্তী চাষিরা ১৪-১৫ বছর ধরে বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম, কলা, মরিচ, বেগুন, কপি, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করে আসছেন। নদীতে পানির ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিপাতে বন্যা হয়ে যায়। ফলে বছরে দুই বার চাষ করা গেলেও এখন আবহাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিন-চার ফসল ফলাতে পারছে কৃষক। এতে করে বর্ষা কাটিয়ে খরা মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষক।

বয়োবৃদ্ধরা জানান, এক যুগ আগেও পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে। এই দুই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে আঁতকে উঠতো নদী পাড়ের হাজারও বাসিন্দা। এখন পানি না থাকায় ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে ছোট বড় প্রায় দুই শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার সময় দুই-তিন মাস বাদে বছরের বাকিটা সময় নদীর বুক চিরে পুরোদমে চলছে চাষাবাদ। সীমান্তঘেঁষা এই নদী তিনটি এখন অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র আয়ের উত্স। নদী শুকিয়ে যাওয়া এখন জীবন-জীবিকায় কৃষি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

এ দিকে ধরলা ও বারোমাসিয়ার বুকে চাষাবাদ করে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও নদীতে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে পরিবারগুলো কঠিন দুশ্চিন্তায় পরেছেন। এক সময় ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদনদীতে নানান প্রজাতির মাছ শিকার করে তারা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। পানি প্রবাহ না থাকায় এসব মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে এখানকার জেলে পরিবাররা পেশা হারিয়ে অনেকেই দিনমজুর, রিতশাচালক, মালিসহ নানা বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হলেও কিছু জেলে পরিবার নদীতে মাছ শিকার করতে না পেরে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন।

উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ধরলা পাড়ের বোরোচাষি আলমগীর হোসেন ও জমসেদ আলী জানান, তারা প্রত্যেকেই ধরলার বুকে পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করছেন। তাদের মতো শতশত কৃষক ধরলার বুকে বোরো, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করছেন। তারা প্রত্যেকে বিঘাপ্রতি ২৫-২৮ মণ করে ধান ঘরে তোলেন। একই এলাকার ভুট্টাচাষি নুর ইসলাম নুর জানান, ধরলার বুকে দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এ বছরও ভুট্টার ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১০ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরোর চাষাবাদ করেছে।

সেই সঙ্গে ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ নদীর অববাহিকার কৃষকরা ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন। অন্যদিকে উপজেলা জুড়ে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদনদীর অববাহিকায় প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়াও কলা ৬৫ হেক্টর, বাদাম ৮ হেক্টর, ডাল ৭ হেক্টর, কপি ৫ হেক্টর, সরিষা ১০ হেক্টর ও মরিচ ৫ হেক্টর চাষাবাদ করেছে।

ইত্তেফাক/এএইচপি