নমনীয় সোলার প্যানেল থেকে শুরু করে হাঁটার সময় জ্বালানি উৎপাদন— আমাদের মুমূর্ষু গ্রহটিকে বাঁচাতে আইডিয়ার কোনো অভাব নেই। শুধু চলতি বছরেই নাকি এক লাখ আশি কোটি ডলার তথাকথিত ‘ক্লিনটেক’ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ আমাদের কার্বন নির্গমন কমাতে সেই অর্থ ঢালা হচ্ছে। হাজার হাজার উদ্যোগপতির জন্য সেটা বিশাল এক অংক বটে।
কিন্তু এই সব ব্যবসা কি ভবিষ্যতের গতি বদলাতে পারবে?
ক্লিনটেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইডিয়া থেকে বড় আকারে উৎপাদন, রাজনীতি ও রাষ্ট্রের নীতি, প্রতিশ্রুতি ও সমস্যার দিকে নজর দেওয়া যাক।
জার্মানির ওসট্রোম কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা মাটিয়াস মার্টেনসেন নিজের কোম্পানি সম্পর্কে জানালেন। তারা ক্লিনটেক সফটওয়্যার সৃষ্টি করেছেন। সেই অ্যাপ মানুষকে জীবাশ্ম জ্বালানি ছেড়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির পথে এগোতে সাহায্য করে।
এর মাধ্যমে কতটা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, মানুষ তা জানতে পারে বা বিদ্যুতের জন্য কম মাসুল দিতে কখন ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা উচিত, সে বিষয়েও পরামর্শ পাওয়া যায়। মাটিয়াস বলেন, সারা দিনে প্রতিটি ঘণ্টায় মাসুল বদলে যায়। যেমন সকালে মাসুল অত্যন্ত বেশি হয়। অনেক রোদ উঠলে দাম কমে যেতে পারে। আবার দাম বেড়েও যেতে পারে। বিদ্যুতের মাসুল কম হলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন, আমরা সেটাই চাই।
মাটিয়াস সেই হাজার হাজার নতুন উদ্যোক্তাদের একজন, যিনি বাজারে একটা শূন্যস্থান দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ আমাদের গ্রহ বাঁচাতে ‘ক্লিনটেক’ প্রযুক্তির এখনো অনেক অভাব রয়েছে।
জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করে আরো নতুন ও পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার প্রবণতা আট বছর আগে বেশ জোরালো উৎসাহ পেয়েছিল। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা সীমিত রাখার চেষ্টা করতে বিশ্বনেতারা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রকৃতির সুরক্ষা করেও আরামদায়ক জীবন বজায় রাখাই হলো সেই উদ্যোগের লক্ষ্য। বেঁধে দেওয়া সেই তাপমাত্রা হলো দেড় ডিগ্রি আর চুক্তিটির নাম প্যারিস এগ্রিমেন্ট।
তারপর ইইউ দেশগুলো একটি অঙ্গীকার করলো। ইইউ-র মতে, ‘ইউরোপীয় গ্রিন ডিল জলবায়ুর জন্য। মানুষের জন্যও সেটা ভালো। ২০৫০ সালের মধ্যে তারা বায়ুমণ্ডল থেকে দূষণের সমান পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে।’
তবে দুই বছর আগে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে আমাদের জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক দেশ পুতিনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে অন্য সূত্র থেকে তেল সংগ্রহের চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহে আরো বিনিয়োগ করে তারা দীর্ঘমেয়াদী নীতি গ্রহণ করেছে। কারণ একই বছরে মার্কিন প্রশাসন ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’ নামের আইন প্রণয়ন করে বিশাল ধাক্কা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই আইন জলবায়ুর ক্ষেত্রে সর্বকালের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
আবার মূল প্রশ্নে ফেরা যাক। পরিস্থিতি সত্যি বদলাতে চাইলে ক্লিনটেক কোম্পানিগুলির আরও অর্থায়নের প্রয়োজন। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে বিপুল ঘাটতি রয়েছে। সেইসঙ্গে চাই মানানসই সরকারি নীতি। তা না হলে পরিবর্তন কার্যকর হবে না।
জলবায়ু সংক্রান্ত অঙ্গীকার সত্যি কার্যকর করতে হলে ২০৩০-এর দশকের শুরু থেকে বছরে সাড়ে চার লাখ কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে।
বড় কোম্পানি, ব্যাংক ও বিশাল পেনশন ফান্ড জলবায়ু সুরক্ষার লক্ষ্যে আসরে নামলে তবেই সেই পরিবর্তন আসবে। কারণ বর্তমানে আমাদের গ্রহের নিরাপত্তা ও ক্লিনটেক প্রযুক্তির প্রয়োগের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে।