মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হাসের দুই বছর

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৯

আমার দেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এটা একদিন একদিন করে আসে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তৃতীয় বছর শুরুর সময়ে, এই কথাগুলোকে আমার সত্যি বলে মনে হয়। প্রতিদিন এই দেশের সম্ভাবনা, জনগণের শক্তি ও সহনশীলতা এবং এর প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ আমাকে মুগ্ধ করে। যেমনটা আমি গত বছর বলেছিলাম, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে – এমন এক ভবিষ্যত যা একদিন একদিন করে এগিয়ে আসে – আমি এই দেশের সামনে সম্ভাবনা দেখতে পাই, তবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও চোখে পড়ে।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের আগে, যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছিল, যা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে। কিন্তু তা ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্র এখনও বাংলাদেশ ও সর্বত্র গণতন্ত্রের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। সহজ করে বলতে গেলে, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষের কল্যাণে, গণতন্ত্র হলো স্থায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়।

আমরা সাহসী সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবো। যেসব গণমাধ্যমকর্মীরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক দমন ও হয়রানির শিকার হন, তা অবসানের আহ্বান আমরা অব্যাহত রাখবো। আমরা চাপ অব্যাহত রাখবো, যাতে বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা বজায় থাকে। আমরা আরও উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের পথকে সুগম করতে অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখবো।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে – এমন ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করবো। এই বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ যে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক একই গতিতে এগিয়ে যেতে চায়। আমি এরমধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা শুরু করেছি, যেখানে আমরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি।

উদাহরণস্বরূপ সামাজিক ও পরিবেশগত আন্তঃসংযুক্ত বিষয়গুলোর কথা বলা যায়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার টিম এবং আমি জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে পরিচ্ছন্ন শক্তিতে রূপান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে একসাথে কাজ করা অব্যাহত রাখতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন সবাইকে প্রভাবিত করে, আমেরিকান এবং বাংলাদেশি সবাইকেই। আমি আশা করি, আমাদের যে চমৎকার সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণ ১০ কোটিরও বেশি কোভিড টিকা পেয়েছেন, তা আরও বৃদ্ধি পাবে।

আমাদের দুই দেশ এবং এই অঞ্চলের মধ্যে নিরাপত্তার সম্পর্কও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সামরিক বাহিনী (বা সশস্ত্র বাহিনী) এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কমাতে একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা বাড়ানোর আরও উপায় খুঁজে বের করছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রেও আমরা ভূমিকা রাখতে পারবো বলে আশা করছি।

শ্রমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, বাংলাদেশের আইন, নীতি এবং অনুশীলনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি বৈশ্বিক শ্রম কৌশল নির্ধারণ করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশকে এমন আইন ও নীতি গ্রহণে উৎসাহ দিতে এই কৌশল আমাদের পরিচালিত করবে, যার ফলে শ্রমিকরা নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক সংগঠন তৈরি ও যোগদান করতে পারেন। সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন সহায়তা প্রদানসহ শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী, পাশাপাশি বাংলাদেশের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির জন্য একক বৃহত্তম বাজার। পারস্পারিক সুবিধার জন্য আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কার্যকরী করতে পারি এবং করা উচিত।

পরিশেষে, গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে টেকসই মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য এবং মায়ানমারের নিরাপদ পরিস্থিতি সাপেক্ষে সকলের জন্য নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।

ভবিষ্যৎ একদিন একদিন করে আসে এবং প্রতিটি দিনই নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। আপনি যখন সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে এবং আমরা আপনার এই যাত্রায় সবসময় আপনাদের সমর্থন করবো।

তথ্যসূত্র: ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ইত্তেফাক/এসকে