টিভি রিয়েল্যাটি শো জনপ্রিয় একটি শো হলো ‘কে হবে কোটিপতি’। পর্দায় কোটিপতি হয় একজন। অভিযোগ রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) ছোট পদ থেকে বড় পদে চাকরির পাওয়ার পর পর অধিকাংশ কর্মচারি-কর্মকর্তা যেন প্রতিযোগিতা করেন কে হবেন সবার আগে কোটিপতি। কোটিপতি হতে গিয়ে তখন তারা বেছে নেন অসাধু উপায়। তাদেরই একজন মো. আব্দুল করিম।
আব্দুল করিম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) থেকে পড়ালেখা শেষ করে ২০১৮ সালের শেষের দিকে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসাবে চাকরি নেন রাজউকে। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এ (গাউক)। চাকরির মাত্র ৭ বছরেই গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য (চুক্তি ভিত্তিক), ঠিকাদারদের থেকে ঘুষ-কমিশন বাণিজ্য, ব্যবসায়িক চুক্তি ও অবৈধভাবে লেনদেন করে গড়েছেন নানা সম্পদ। নামে-বেনামে ঢাকাসহ গ্রামের বাড়ি রংপুরে রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ।
সম্প্রতি, গুলশান-১ রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স ভবনে অবস্থিত এলিট কনাস্ট্রাশন কোম্পনির হয়ে বাদী দিবাকর চন্দ্র রায় ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় (মামলা নং ২৯০৬/২৩) এর পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ড বিধি ৪০৬ ধারা, ৪২০ ধারা ও ৫০৬ ধারায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি ছিলেন আব্দুর রহিম। বর্তমানে বিবাদী মো. আব্দুল করিম, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) জামিনে আছেন।
এদিকে, ২৯/১/২০২৪ইং তারিখে স্মারক নম্বর-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.২৭.০১.২৪.(১৬৮) এ জানা যায়, এলিট কনাস্ট্রাশন কোম্পনির ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি থাকায় রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি ৫ মোতাবেক মো. আব্দুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এলিট কনাস্ট্রাশনের মামলার প্রতিবেদনে জানা যায়, এলিট কন্ট্রাকশন, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স কাম কার পার্কিং গুলশান, ঢাকা সি.আর. মামলা নম্বর ২৯০৬/২৩ গুলশান, ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬ পেনাল কোড রুজু করে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্তের জন্য ডিসি ডিবি গুলশান বরাবরে পাঠানো হয়। ডিসি ডিবি গুলশান কার্যালয়ের স্মারক নম্বর (গো:গুল:বি:) (সি আর ২০২৩) ৪০৪ তারিখ ২৪/০৮/২০২৩ খ্রি: মুলে মামলাটির তদন্তভার কাজী শরিফুল ইসলাম পুলিশ পরিদর্শক, ক্যন্টমেন্ট জোনাল টিম, গুলশান গোয়েন্দা বিভাগকে প্রদান করে। তদন্ত শেষে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দেন।
এতে দেখা যায় বিবাদী মো. আব্দুল করিম, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), পিতা: আফসার আলী, বনানী নিবাসী, ঢাকা। বাদীর (এলিট কন্ট্রাকশন) নিকট হতে ২১/০৩/২০২১ তারিখের ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা, ২১/০৪/২০২১ইং তারিখে ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা, ২৫/০৫/২০২১ তারিখে নগদে ২০ বিশ লাখ টাকা ও ২৭/৭/২০২২ তারিখে নগদে ৩০ লাখ টাকা, মোট ৬০ লাখ টাকা বিভিন্ন অজুহাতে ধার হিসেবে গ্রহণ করে।
প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণ আদালত আব্দুল করিমকে মামলায় জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। বিগত ১/১/২০২৪ ইং তারিখের সি.এম.এম আলাদতের স্বাক্ষরিত বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক বিবেচনায় আপষের শর্তে ১ হাজার টাকা বন্ডে বিজ্ঞ কৌশলী এবং একজন স্থানীয় ব্যক্তির জিম্মায় আসামির জামিন আগাম ধার্য্য তারিখ ৩০/০১/২০২৪ পর্যন্ত মো. সাদ্দাম হোসেন মেট্রোপলিট্রন ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুর করেন।
এর আগে, কর্মজীবনের শুরুতেই আব্দুল করিম সরকার বিরোধী বিভিন্ন অপ-প্রচারে লিপ্ত হয় যার প্রমাণ মিলে রাজউকের এক অফিস আদেশে। অফিস আদেশ নম্বর-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.৩১.০০৭.১৮-২৩৯৮ তারিখ-১৪/০৮/২০১৮ সাল। আব্দুল করিম তার ফেসবুক আইডি হতে ৪ জানুয়ারি ২০১৭, ৩১ জুলাই ২০১৭, ১১ ও ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৫ মে ২০১৮, ৪ আগষ্ট-২০১৮ তে সরকার বিরোধী আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান এবং বিভিন্ন অপপ্রচার শেয়ার করায় রাজউকের ভাবমূর্তি মারাত্বক ভাবে ক্ষুন্ন হয়। রাজউক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর ৩৭ (খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরন ও ৩৭ (ছ) অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত হওয়ায় বিগত ৮/৮/২০১৮ ইং তারিখে উক্ত প্রজ্ঞাপনে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে রাজউক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এবং ৪৩ (১) বিধি মোতাবেক আব্দুল করিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিল।
অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আব্দুল করিম ইত্তেফাক ডিজিটালকে বলেন, ‘তমা কনস্ট্রাকশন ও রাজউকের একটি সিন্ডিকেট আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা করে। আর আমার একাউন্ট ব্যবহার করে আমার ভাগিনা লেনদেন করেছে। তাই আমি অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জড়িত নই।’
সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিম অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন ও আইন-অতিরিক্ত) মো. মমিন উদ্দিন ইত্তেফাক ডিজিটালকে বলেন, ‘অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল করিম, ‘এলিট কনাস্ট্রাশন থেকে ৬০ লাখ টাকা আত্নসাতের মামলায় ফৌজধারী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি থাকায় রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৩ এর উপবিধি ৫ মোতাবেক সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে ।’