একবিংশ শতাব্দীতে জাতীয় জীবনের উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন। ইন্টারনেট অব থিংস, রোবোটিকস, ক্লাউড কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, সেন্সর, অটোমেশন, থ্রিডি প্রিন্টিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জিন ও প্রকৌশল প্রযুক্তির সমন্বয়ে আজকের বিশ্বে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্বায়নের এই প্রশস্ত আঙিনায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে করণীয়, ভবিষ্যত্-সম্ভাবনা, পরিকল্পনা, দক্ষ জনবল তৈরির উপায়, সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বর্তমান প্রেক্ষাপটে পর্যালোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের সঙ্গে সাধারণ জনগণকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা ও তাদের প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দক্ষ করে তোলার প্রয়াস সফল হলেই অর্থনীতিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
বর্তমান ও ভবিষ্যত্-বিবেচনায় প্রাধান্যের ভিত্তিতে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে যেসব মানুষ পারদর্শী ও পেশাদার, তাদের কদর পৃথিবীব্যাপী বেড়েই চলেছে। তাই পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির বিষয়টি সামনে রেখে আমাদের দেশে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে স্মার্ট ইকোনমির ধারণা বর্তমানে একটি পরিজ্ঞাত বিষয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ৩ লাখ মানুষ সক্রিয়ভাবে আইসিটি খাতে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া ৫ লাখ রেজিস্টার্ড ফ্রিল্যান্সার আইসিটি বিষয়ে কাজ করছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে জনবহুল বাংলাদেশে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে প্রযুক্তির মাধ্যমেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রয়োজন। মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইনে মানি ট্রান্সফার, মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন প্রভৃতি এখন বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় অনলাইন-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। যথোপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে আমাদের জনবল হয়ে উঠবে আরো দক্ষ ও সমৃদ্ধ।
বর্তমানে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে চাকরির নিবন্ধন, হজযাত্রার নিবন্ধন, সরকারি ফর্ম সংগ্রহ ও জমাদান, ট্যাক্স বা আয়কর রিটার্ন দাখিল, বিদ্যুত্, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, ই-সেবা প্রভৃতি পাওয়া যায়। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং বাজেট প্রণয়নেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে শিল্প, কৃষি, চিকিত্সা, শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ জনবল তৈরি, দূরদর্শী নেতৃত্ব, তরুণদের অংশগ্রহণ ও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রযুক্তিগত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনীতির দক্ষ মানবসম্পদ উত্পানশীলতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সরকারের আয় বাড়াতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আর আয় বৃদ্ধি হলে তা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা এবং সমাজের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। এভাবে আইটি অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় সেক্টরের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পাবে এবং উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে এটা কেবল উদার, সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত ‘ডিজিটাল অর্থনীতি’র মাধ্যমেই সম্ভব।
অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক কাজ একসঙ্গে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের হিসাব, লাইসেন্স ফি সংগ্রহ ও মনিটর, অপরাধ চিত্র সংগ্রহ, ভোট গণনা ফলাফল তৈরি, তথ্য প্রেরণ ইত্যাদি অসংখ্য কাজ অতি সহজে করা যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে বিশ্বের অগ্রগামী জাতিসমূহ। তারা সর্বদাই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে এ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই। খোলা বাজারের দ্বার দিয়ে তারা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। সামগ্রিক উন্নয়নে আমাদেরও এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক :শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর