বাংলাদেশ ক্রিকেট একটি চমত্কার দিন উপহার পেল। মিরপুরে গতকাল নিগার সুলতানা জ্যোতিরা যে আক্ষেপ তৈরি করেছেন তার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) তৈরি করেছে উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। নারীদের মলিনতা কাটিয়ে ডিপিএল এনে দিয়েছে স্বস্তি।
প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, তাওহীদ হৃদয়, পারভেজ হোসেন ইমনরা। এর মধ্যে সাকিব ও তামিম হাফ সেঞ্চুরি পেলেও হৃদয় ও ইমন তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। বল হাতে সাকিব দেখিয়েছেন চিরচেনা ঝলক। ডিপিএল থেকে তোলা এই ঝলক যেন সাগর পাড়ের সাগরিকায়ও দেখা যায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, সেই প্রত্যাশাই এখন ভক্তদের চোখেমুখে।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে ডিপিএলের তিনটি ম্যাচ মাঠে গড়ায়। সাভারের বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে খেলেছে শেখ জামাল-গাজী গ্রুপ ও চার নম্বর মাঠে প্রাইম ব্যাংক-মোহামেডান। অপরদিকে একই সময়ে নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে নেমেছিল আবাহনী-রূপগঞ্জ টাইগার্স।
শেখ জামাল-গাজী গ্রুপ ম্যাচে সকলের চোখ ছিল সাকিবের দিকেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছুটি নেওয়া বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ছুটি বাতিল করেছেন। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি ও প্রথম টেস্টে না খেললেও সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে সাদা পোশাকে নামবেন তিনি। এ দিকে সিরিজ চলাকালীন নিজের ব্যস্ততা খানিকটা মিটিয়ে নেমে গেছেন ২২ গজের আঙিনায়। বিপিএলের পরে মাঠে ফিরে চেষ্টা করেছেন নিজেকে ছন্দে রাখতে।
গতকালের ম্যাচটি সেই চিরচেনা সাকিবকেই আরেকবার চিনিয়েছে। ব্যাট হাতে ৫৩ রান করে মাগুরা-১ আসনের এই সংসদ সদস্য যতটা স্বস্তি পেয়েছেন, তার চেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছেন বল হাতে। ৯ ওভারে ২টি উইকেট তুলে দিয়েছেন মাত্র ১৪ রান। শেখ জামালের হয়ে সাকিবের পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন জিয়াউর রহমান। তাদের রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩৩ রান করে দলটি। এরপরে ডিএলএস পদ্ধতিতে ৪৫ ওভারে ২৩২ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জবাবে ৪২.২ ওভারে ১৯২ রান তুলতে সবকটি উইকেট হারায় গাজী গ্রুপ। তাতে ৩৯ রানে জয় পায় সাকিবদের শেখ জামাল। বিকেএসপিতে সাকিবদের পাশাপাশি গতদিন তামিমের দলও খেলেছে।
প্রাইম ব্যাংক-মোহামেডান ম্যাচে তামিমদের দল হেরে গেলেও তার হাফ সেঞ্চুরি ও ইমনের সেঞ্চুরি ছিল নজর কাড়ার মতো। ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৯ রান করে প্রাইম ব্যাংক। দলটির হয়ে ৬৫ রান করেন অধিনায়ক তামিম। আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন করেন ১১০ রান। তবে এই দুই ব্যাটার বাদে বাকিরা ভালো করতে পারেননি। খারাপ সময় কাটানো সাব্বির রহমান রুম্মন ৩৯ রানে হয়েছেন রান আউট। সবমিলিয়ে ২৭৯ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নামে মোহামেডান। তবে বৃষ্টির কারণে ডিএলএস পদ্ধতিতে ৪৭ ওভারে নতুন লক্ষ্য হয় ২৭২। মাইদুল ইসলাম অংকনের ৭৮, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৪২, আরিফুল ইসলামের ৪৫ রানে জয়ের হাতছানি দেয়। আবু হায়দার রনির ৩৬ বলে ৫৪ রান ও কামরুল ইসলাম রাব্বির ১৪ বলে ২৮ রান সেই জয় নিশ্চিত করে। রনি ও রাব্বির ঝোড়ো ব্যাটিং নাহলে প্রাইম ব্যাংকেরই জয় নিশ্চিত হতো। এমন হারের পেছনে প্রাইমের ব্যাটারদের দায় রয়েছে। দলটি ২১৮ রান পর্যন্ত মাত্র ১টি উইকেট হারিয়েছিল। কিন্তু এরপরে ৪১ রান তুলতে ৮টি উইকেট হারায় প্রাইম ব্যাংক। এর পেছনে বল হাতে ভূমিকা রেখেছেন নাসুম আহমেদ ও আরিফুল হক। মোহামেডানের এই দুই ক্রিকেটার নিয়েছেন ৫টি উইকেট। ৯ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন নাসুম। আর আরিফুল ৩ ওভার বল করলেও নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট। এখানেই বেশ পিছিয়ে গেছে প্রাইম। তবে দলটি হারলেও বিশেষ বার্তা দিয়ে রাখলেন ইমন। চলতি ডিপিএল থেকে এ নিয়ে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি হলো। ৬ ম্যাচ খেলা ইমনের বাকি তিন ম্যাচের একটিতে রয়েছে হাফ সেঞ্চুরি। এখন পর্যন্ত তিনিই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৭টি চার ও ১৯টি ছক্কা।
অপরদিকে আবাহনী-রূপগঞ্জ ম্যাচে ৮৪ বলে ১২৫ রান করে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। ১১টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১২৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এই ম্যাচে আবাহনীর হয়ে জাকের আলি অনিক করেছেন ৭৮ রান ও অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত করেছেন ৪৩ রান। দলটির করা ৩২০ রানের বড় সংগ্রহের ধারেকাছেও যেতে পারেনি রূপগঞ্জ। হারতে হয়েছে ১৪০ রানে। সবমিলিয়ে ডিপিএল উঠে এসেছে আলোচনার টেবিলে।