মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

মূল্যস্ফীতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় হুমকি

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০০

বর্তমান অবস্থায় দেশে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মূল হুমকি বলে মনে করেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও)। সেই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে দুই বছর ধরে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, সেটাকেও ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা।

প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারসের (পিডব্লিউসি) এক জরিপে অংশ নেওয়া দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা এরকম মন্তব্য করেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় অর্ধেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ৪৭ শতাংশ সিইও মূল্যস্ফীতিকে মূল হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গত বছরের জরিপেও ৪৭ শতাংশ সিইও মূল্যস্ফীতিকে ব্যবসার মূল হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।

গত বছরের ২ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ১০৫টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ হাজার ৭০২ জন সিইওকে নিয়ে এই জরিপ করা হয়। পিডব্লিউসি জানিয়েছে, বৈশ্বিক জরিপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও এই জরিপ করা হয়। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২ জন সিইও মতামত দেন। সিইওদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলে বেচাকেনা কমে যায়; স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে যায়। ২০২২ সাল থেকেই দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। গত বছরের সিইও জরিপেও এ বিষয়টি উঠে আসে। তবে চলতি বছর ৪৫ শতাংশ সিইও এটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন; গত বছর এই হার ছিল ৩৪ শতাংশ। তৃতীয় হুমকি হিসেবে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন সিইওদের হার বেড়েছে। ২০২৪ সালে যেখানে ২৯ শতাংশ প্রধান নির্বাহী ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, ২০২৩ সালে সেখানে ২২ শতাংশ প্রধান নির্বাহী এ কথা বলেছিলেন। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আরও যেসব হুমকি প্রধান নির্বাহীরা চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো হলো সামাজিক অসমতা, সাইবার ঝুঁকি, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। জরিপে অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ সিইও সামাজিক অসমতাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে যা ছিল ১৬ শতাংশ। এবার জলবায়ু পরিবর্তনকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ১৪ শতাংশ প্রধান নির্বাহী; আগের বছর যা ছিল ১৩ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ১৪ শতাংশ প্রধান নির্বাহী; আগের বছর যা ছিল ১৬ শতাংশ। এছাড়া প্রধান নির্বাহীরা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মূল্যস্ফীতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সাইবার ঝুঁকি, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও সামাজিক অসমতা। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক প্রবণতার প্রভাব বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ছে। সেজন্য দেশের বাজারব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৫ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, গত পাঁচ বছরে তারা কোনো না কোনো পরিবর্তন এনেছেন। শুধু তাই নয়, ৭২ শতাংশ বলেছেন যে, গত পাঁচ বছরে তারা অন্তত এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার বদৌলতে কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আগামী এক দশক বা তারপর ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থায়িত্ব নিয়ে আশাবাদ কমছে। সেটা যেমন স্থানীয় পরিসরে, তেমনি বৈশ্বিক পরিসরেও। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশি সিইও মনে করেন না, এখন তারা যে মডেলে ব্যবসা করছেন, আগামী এক দশক বা ১০ বছর পর তা বিশেষ সহায়তা ছাড়া টিকে থাকতে পারবে। এর আগের বছর এই হার ছিল ৫০ শতাংশ।

ইত্তেফাক/এমএএম