শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

টাকা চুরির অপবাদে দুই কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন 

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০১

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় টাকা চুরির অপবাদে দুই কিশোরকে বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে রশি দিয়ে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দফায় অমানবিক নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামুইট তিনমাথা বাজারে এই ঘটনা ঘটে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, নামুইট তিনমাথা বাজারে ওয়াক্ত নতুন জামে মসজিদের দানবাক্স থেকে টাকা চুরির অভিযোগ তুলে দুই কিশোরকে রাস্তা থেকে ধরে আনে নামুইট গ্রামের মোড়ল নজরুল ও কাচু প্রামাণিক। পরে গ্রামের কয়েকজন মোড়ল একত্রিত হয়ে দুই কিশোরকে রশি দিয়ে গাছে বেঁধে সালিশ বসায়। অমানবিক নির্যাতন ও গাছে বেঁধে হেনস্তার সময় গ্রাম্য মোড়লদের হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা পায়নি দুই কিশোর। এরমধ্যে এতিম এক কিশোরকে নির্যাতনের সময় তার ভিক্ষুক মা মোড়লদের পায়ে পড়ে কান্না করলেও সন্তানকে রক্ষা করতে পারেননি। তারা আহত হলেও চিকিৎসা করানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সড়কের মোড়ে নির্যাতনের সময় শত শত জনতা ভিড় করেন। তবে কয়েকজন ব্যক্তি মারধর না করার অনুরোধ করলেও গ্রাম্য মোড়লরা নির্যাতন চালিয়ে যান। 

নির্যাতনের শিকার এক কিশোর জানায়, তারা বাবা-ছেলে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সকালে দুই বন্ধু অটোভ্যান নিয়ে নন্দীগ্রাম শহরের দিকে যাচ্ছিলো। নামুইট মোড়ে ভ্যান থামানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে চোর চোর করে চিৎকার করে নামুইট গ্রামের মাতব্বর নজরুল। কয়েকজন মোড়ল ও স্থানীয় লোকজন এসে যাচাই না করেই দুই কিশোরকে মারতে মারতে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোর আখ্যা দিয়ে একঘণ্টা অমানবিক নির্যাতন করা হয়। প্রমাণ ছাড়া মারধরের বিষয়ে উপস্থিত কয়েকজন প্রশ্ন তোলায় দুই কিশোরকে মসজিদের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা নির্যাতনের পর দুই কিশোরকে নামুইট তিনমাথা মোড়ে এনে কড়ইগাছে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে।
 
গ্রাম্য মোড়লরা দাবি করেন, ফজর নামাজ শেষে মসজিদ থেকে মুসল্লিরা চলে যাওয়ার পর দুই কিশোর দানবাক্স থেকে টাকা চুরি করে। তাদেরকে আটক করে শাসন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড নামুইটের সাবেক কাউন্সিলর রহমত আলী বলেন, ‘মসজিদের টাকা চুরির কারণে দুইজনকে শাসন করা হয়েছে। তাদের পুলিশে সোপর্দ করার চেষ্টা করেছি। জানানোর পরও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। ’

নন্দীগ্রাম থানার ওসি আজমগীর হোসাইন আজম বলেন, ‘চুরির অপবাদে গাছে বেঁধে হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। ভিডিওসহ তথ্য পেয়েই তাদের ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে।’

ইত্তেফাক/পিও