ভারতীয় খেলোয়াড়দের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স, দলের বিপদে কাজে আসেনি। তবুও পক্ষ নিয়েছেন উপদেষ্টা কোচ সিদ্ধার্থ পান্ডে। কর্মকর্তাদের পালটা অভিযোগ, বিদেশি সংগ্রহ ভালো ছিল না, অর্থ জলে গেছে, দলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় আশরাফুলকে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সিদ্ধার্থ পান্ডে, চাপা ক্ষোভ আশরাফুলের, মুখ খোলেননি আশরাফুল, হকির কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব। আবাহনীর হকি যেন লেজেগোবরে। কারো মুখে কথা নেই।
দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় মাহবুবুল এহসান রানা ক্ষুব্ধ। আবাহনীর হকির কেন করুণ হাল তা নিয়ে তিনি মুখ খলতে চান, কর্তৃপক্ষকে জানাতে চান। এভাবে আবাহনীর হকি চলতে পারে না। রানা বলেন, 'আমাদের তো অর্থের অভাব ছিল না। ক্লাবের নেতৃবৃন্দ সবরকম সহযোগিতা করেছেন, অর্থের একফোটা কার্পণ্য করেননি। তাহলে আমাদেরকে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হলো কেন।'
হকি স্টেডিয়ামে আবাহনীর হকি খেলোয়াড়দের ক্যাম্প, গতকাল ঈদের ছুটিতে চলে গেছেন সবাই। যাওয়ার আগে ক্যাম্পে মিটিং হয়। ঈদের পর তিনটা ম্যাচ আছে। জিততে হবে। ঊষা, অ্যাজাক্স এবং মোহামেডান। জিতলে কী হবে? কোচরা তাদের খেলোয়াড়দের বুঝিয়েছেন তোমরা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করো। তোমরা অনেক ভালো খেলোয়াড় সেটা প্রমাণ করো।'
যেভাবেই প্রমাণ করুক, শিরোপা জয়ের সুযোগ আবাহনীর হাতে নেই। আবাহনীর কোচ হেদায়েতুল ইসলাম খান রাজীব। আবাহনীতেই খেলেছেন। এখন কোচ। দলের জার্সিটার প্রতি ভালোবাসা একবিন্দু কমেনি। আবাহনীর লেজেগোবরে অবস্থা দেখে নিজেও কষ্ট পাচ্ছেন। কেন এই এই অবস্থা? উত্তর নেই। রাজীবের কণ্ঠ জমে যায়-'এত মিস করলে কি হয়। দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্য দেখি না।'
উলটো কথা আবাহনীর ভারতীয় উপদেষ্টা কোচ সিদ্ধার্থ পাণ্ডের। তার চোখে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভালো না। ক্ষুব্ধ কোচ। এভাবে খেললে আবাহনী জিতবে কিভাবে, প্রশ্ন সিদ্ধার্থ পান্ডের। তার কথায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ভালো খেললে আবাহনীর এই অবস্থা হতো না। মেরিনার্সের কাছে হারের পর ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সিদ্ধার্থ বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও তার দেশের খেলোয়াড়দের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বলেছেন, 'অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন বিদেশিরা। তাদের খেলা নিয়ে প্রশ্ন নেই।'
দেখার দায়িত্ব ছিল সিদ্ধার্থ পান্ডের, তিনি কেন সেটা নিয়ে করেননি-প্রশ্ন রাজীবের। ভারতীয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স সমালোচিত হয়েছে। মোহামেডান, মেরিনার ইয়াংস, অন্যান্য ক্লাবের বিদেশিদের তুলনায় আবাহনীর বিদেশিদের মান ভালো না, তারা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। রাজিব বললেন, 'আমার কাছে দেশি আর বিদেশিদের মধ্যে পার্থক্য মনে হয়নি।' সিদ্ধার্থ বলেছেন, 'আশরাফুল কী খেলেছেন? কথাটা আশরাফুলের কানে তুলতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি। কিছু বললেন না। চাপা ক্ষোভ চেপেই রাখলেন দেশ সেরা পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট।
আবাহনীর কর্মকর্তা জাকি আহমেদ রিপন জানিয়েছেন, ইউরোপ থেকে খেলোয়াড় আনার আগ্রহ ছিল। দুজন আসবেন এমন আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু তা না করে আনা হয়েছে ভারতীয় খেলোয়াড়। যারা আসা যাওয়া করে খেলেছেন। এক সঙ্গে অনুশীলনেরও সুযোগ পাননি। দেশি কোচ রাজীব একা দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন দলটা ছিল একরম। হঠাৎ করে ভারতের অনূর্ধ্ব-২১ দলের সাবেক খেলোয়াড় সিদ্ধার্থ পান্ডেকে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পর দলের অবস্থা হয় লেজেগোবেরে। ক্ষতি হয়েছে আবাহনী। প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচা করে দেশিরা কেন ভালো খেলতে পারছিল না সেটা আবাহনী হতাশা ছাড়া কিছুই পায়নি।