বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

প্রচণ্ড গরমে ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি

  • খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ 
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
  • ঠাণ্ডা পানি ও রাস্তার পাশের শরবত না খাওয়ার পরামর্শ
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০০

সারা দেশে এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। গরমে মানুষের অস্বস্তিকর অবস্থা। অতিরিক্ত গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্করা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যারা শারীরিকভাবে নাজুক অবস্থায় আছেন, তাদের মাথাব্যথা, হিটস্ট্রোক, বমি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।

তারা বলেছেন, প্রচণ্ড গরমে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত ঘামে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বা শরীরে লবণের ভারসাম্য কমে যেতে পারে। এতে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। তাদের তাপপ্রবাহ এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। ছায়া-শীতল পরিবেশে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রচণ্ড গরম সবার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। তবে যারা শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান নয়, তাদের ঝুঁকি বেশি। এর মধ্যে আছে বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী এবং শিশু। গরমে শরীরে সোডিয়াম ও পানি কমে যাওয়ায় ‘হিট স্ট্রোক’-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে বাড়ির বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, পানি সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে, শরীরে সোডিয়ামের ব্যাল্যান্স করতে পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেতে হবে। তবে রাস্তার পাশের বিক্রীত জুস বা ঠাণ্ডা পানি পান করা যাবে না। কারণ ওসব বরফমিশ্রিত পানি সমস্যা বাড়াতে পারে বলে জানান তিনি।

এছাড়া ঋতু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে শিশুদের জ্বর, চিকেন পক্স, মামসসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি হচ্ছে। গরমকালে ধুলাবালি বেড়ে যাওয়া শিশুদের অ্যাজমা ও কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। অনেকের ঘামাচি ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুদের স্বাভাবিক পানি পান করাতে হবে। কাপড় ভিজিয়ে শিশুদের কিছুক্ষণ পরপর মুছে দিতে হবে। নিয়মিত গোসল করাতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।

বিএমডিসি ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ওজিএসবির সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, প্রচণ্ড গরমে গর্ভবতী নারীদের নাভিশ্বাস অবস্থা। যারা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাদের এই সময়টাতে এমনিতেই বমি হয়, গরমে তারা পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। পর্যাপ্ত পানি খেতে পারছে না আর খেলেও বমি হয়ে যাচ্ছে। অনেকের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে এবং পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে ইউরিন ইনফেকশন হচ্ছে। যারা গর্ভাবস্থার শেষদিকে আছেন, তাদের অনেকের ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে, অনেক গরমে জ্বর হচ্ছে—এমন নানা জটিলতা নিয়ে গর্ভবতীরা আসছেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই গরমে অতিপ্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, ডাবের পানি, নরমাল পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবেন এবং বিশ্রামে থাকবেন। এছাড়া বরফ পানি বা ঠাণ্ডা পানি না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।          

ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, সারা দেশে কয়েক দিন ধরে চলা প্রচণ্ড গরমে যে কেউ যে কোনো সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কৃষক ও রিকশাচালকদের মতো যারা রোদে পুড়ে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করেন, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়স্ক ও শিশুরাও ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরে পানিশূন্যতা বা পানিস্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। অনেকের রক্তচাপ ও প্রশ্রাব কমে যেতে পারে। গরমে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া ও পালস (নাড়ির স্পন্দন) কমে যেতে পারে। এ সময় ঘরের বাইরে যতটা কম যাওয়া যায়, ততই ভালো। যারা প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন, তারা পানির সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইনের মতো করে খেতে পারেন। এতে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বের হওয়া লবণের ঘাটতি পূরণ হবে। এছাড়া ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পরতে হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম