মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

ব্রিজের অভাবে ২০ হাজারের অধিক মানুষ দুর্ভোগে

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২০

ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ-উপজেলা মনপুরা থেকেও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ৫ নং কলাতলী ইউনিয়ন। নবগঠিত এই ইউনিয়নের ২০ সহস্রাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন। চারিদিকে কোনো বেড়িবাঁধও নেই। বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার পানি তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। জোয়ার আসলে তাদের বসতবাড়ি ডুবে যায় আবার ভাটা হলে পানি নেমে যায়।

জোয়ারের পানি দিয়েই তাদের গোসল রান্না-বান্না চলে। পুকুর থাকলেরও তা জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। বিচ্ছিন্ন কলাতলী চরে নেই কোনো ভালো মানের রাস্তা। শুধু ৪ কিলোমিটারের একটি পাকা সড়ক আছে। রাস্তার অবস্থাও খুবই নাজুক।

মনপুরা থেকেও বিচ্ছিন্ন ৫ নং কলাতলী ইউনিয়নে ব্রিজের অভাবে ২০ হাজারের অধিক মানুষ দুর্ভোগে। ছবি: ইত্তেফাক

বাজারের সঙ্ঘে মানুষের যোগাযোগের যেসব রাস্তা আছে সেগুলো মাটির রাস্তা। বর্ষাকালে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হলে বড় বড় বাঁশ-কাঠের সাঁকো পার হতে হয়। ৪-৫টি খালের ওপর ৭ থেকে ৮টি সাঁকো রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ সাঁকো পার হচ্ছেন, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ। কিন্তু সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের সেই দাবি এখনো পূরণ হয়নি। নির্মাণ হয়নি কোনো নিরাপদ ব্রিজ। বর্ষাকালে চরের মানুষের চরম দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই।

শুধু তাই নয়, কলাতলী ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব। পর্যাপ্ত নলকূপ না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে জোয়ারের পানি, পুকুরের পানি পান করছেন।

মনপুরা থেকেও বিচ্ছিন্ন ৫ নং কলাতলী ইউনিয়নে ব্রিজের অভাবে ২০ হাজারের অধিক মানুষ দুর্ভোগে। ছবি: ইত্তেফাক

সরজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের কবির বাজার সংলগ্ন খালের ওপর, অফিসখাল বাজার সংলগ্ন খালের ওপর, জাহাঙ্গীরার খালের ওপর, গোলের খালের ওপর, তিনজোড়া খালের ওপর, বাতানখালী খালের ওপর (আবাসন বাজারের উত্তর পাশে) এবং সওদাগর খালের ওপর বিশাল বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন মানুষজন। প্রতিদিন পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসাদি কেনার জন্য কবির বাজার, অফিস খাল বাজার, আবাসন বাজার, রিপন বাজার ও মনির বাজার যেতে হয়। ছোট ছোট স্কুলগামী শিশুরা, নারীরা, বয়স্ক মানুষেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব সাঁকো পার হচ্ছেন।

কবির বাজার সংলগ্ন খালের ওপারে বসবাসকারী মো. তাজল মিকার জানান, বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারীরা ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে সাঁকো পার হয়। এতে পা পিছলে অনেক নারী ও শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, এসব খালের ওপর ব্রিজ চান তারা। কিন্তু এখনো একটি ব্রিজ নির্মাণ হয়নি।

মনপুরা থেকেও বিচ্ছিন্ন ৫ নং কলাতলী ইউনিয়নে ব্রিজের অভাবে ২০ হাজারের অধিক মানুষ দুর্ভোগে। ছবি: ইত্তেফাক

নবগঠিত এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, বিভিন্ন খালের ওপর ৮ থেকে ১০টি বিশাল সাঁকো রয়েছে। ভালো কানো পাকা রাস্তা নেই, বেড়িবাঁধ নেই। আমি সবেমাত্র চেয়ারম্যান হয়েছি। বেড়িবাঁধ, পাকা রাস্তা, পানির কল, খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছি। আমি বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছি, রাস্তাসহ ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। কলাতলী ইউনিয়নে অসংখ্য কাজ বাকি রয়েছে। আমি সব কাজ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ ব্যাপরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ফজল হক বলেন, বিশাল খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আমরা সর্বোচ্চ ১৫ মিটার খালের ওপর ব্রিজ করতে পারি।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান বলেন, নবগঠিত ৫ নং কলাতলী ইউনিয়নে অনেক বড় বড় খাল রয়েছে। কলাতলী ইউনিয়নে নতুন রাস্তার আইডি নবায়ন কাজ চলছে। রাস্তার সাথে খাল সংযুক্ত করে খালের ওপর ব্রিজ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এসকে