মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

সুবর্ণচরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা 

এমপিপুত্রের অনুসারীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন ভুক্তভোগীরা

আপডেট : ১২ মে ২০২৪, ২০:১৫

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ৯ ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরাজিত প্রার্থী। এ সময় এমপিপুত্রের অনুসারীদের হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগীরা। 

এদিকে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের সমর্থদের মারধর, বাড়িঘরে-দোকান পাটে  হামলা ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ৯ ভোট কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণ ও বাতিলকৃত ১৯১৪ ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

রোববার (১২ মে) সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দলের জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখিত দাবি করে প্রশাসন, প্রিসাইডিং ও পুলিং অফিসারদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে ফলাফল কারচুপির অভিযোগ করেন।


এ অভিযাগের প্রমাণ হিসেবে নির্বাচনে ভোট কারচুপি, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ভিডিও চিত্র বড় পর্দায় দেখানো হয়। সংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরাজিত  চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।
 
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্যাহ খান সোহেল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চরজবাবার ইউপির চেয়ারম্যান আইনজীবী ওমর ফারুক ও মোহম্মদপুর ইউপির চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন চৌধুরী বক্তব্য দেন।

এমপিপুত্রের অনুসারীদের হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরাজিত প্রার্থীর অনুসারীরা। ছবি: সংগৃহীত

লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম অভিযোগ করে বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী দলের নির্দেশনা অমান্য করে ছেলেকে জেতানোর জন্য ভোটারদের মাঝে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেন। তার ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়ন বন্ধের ঘোষণাও দেন একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুলের স্ত্রী করিবহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলিও নির্বাচনের আগে তার ছেলের পক্ষে কাজ না করায় এমপির ডিও লেটার না দেওয়ার হুমকি দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

তিনি বলেন, ভোটের শুরু থেকে একরামুল করিম চৌধুরী সুবর্ণচরে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে আমার দোয়াত কলম প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়ে ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি তৈরি করে। ভোটের আগের দিন রাতে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন প্রকাশ্যে কালো টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করেন।
 
তিনি আরও অভিযোগ  বলেন, ভোটের দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুবর্ণচরের চর মহিউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, চর মহিউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর মহিউদ্দিন এনএ প্রো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজীপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ ৯টি কেন্দ্রে তার কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এরপরও ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাকে ভোট দিয়েছেন। ৬১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টি কেন্দ্রের ফলাফলে ১৩শত বেশি ভোটে তিনি এগিয়ে ছিলেন। ৫টি কেন্দ্রের ভোট শেষ হওয়ার ৪ ঘণ্টার ভোটের ফলাফল দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রে তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে কারচুপির মাধ্যমে ভোটের ফলাফলকে পাল্টানো হয়েছে। পুরো উপজেলায় ১ হাজার ৯১৪ ভোট বাতিল করা হয়েছে। 

উল্লেখিত, বাতিল ভোটের বিষয়ে কেন্দ্রে তার এজেন্টরা আপত্তি করলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। বাতিল করা ভোট গণনার পাশাপাশি ৯টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। তিনি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন বলে জানান।

এ সময় চরজব্বার ইউনিয়নের চেউয়াখালি এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তফা, বাজারের ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিন, আপন ভূঁইয়া দোয়াত-কলম প্রতীকের ভোট করার কারণে তাদের ওপর বিজয়ী চেয়ারম্যানের সমর্থকদের হাতে  ভোটের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দেন। 

এ সময় নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কেটি টাকার মালামাল লুঠ করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী মো. মোস্তফা বলেন, প্রতিপক্ষের সমর্থক সন্ত্রাসীরা তার নাতনীর বিয়ে বন্ধ করে দেয়। তারা বলেছেন আওয়ামী লীগ করা কি আমাদের অপরাধ?

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান। গত ৮ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীর কাছে তিনি ৭০৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী আতাহার ইশরাক আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৬৪৮ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম দোয়াত-কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৪৫ ভোট।

ইত্তেফাক/পিও