দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ সময় ২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে শুরু হচ্ছে কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসর। ২২ গজের লড়াইয়ের উত্তাপে গা মাখছে ক্রিকেটবিশ্ব। কোন দলের কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই আলোচনাও চলছে। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে ২০ দল। তাদের শক্তি-দুর্বলতা ও সম্ভাবনা নিয়েই এই আয়োজন। আজ থাকছে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে-
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে হাহাকারের গল্প হয়ে আছে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ম্যাচ ও সুপার ওভারে ‘টাই’ করেও শিরোপা হারাতে হয়েছিল বাউন্ডারি সংখ্যায় পিছিয়ে থাকায়। সেই আক্ষেপ দূর করার মোক্ষম আরেকটি উপলক্ষ আসে দুই বছর পর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। কিন্তু সেখানেও যন্ত্রণা আরেকবার শেল হয়ে বেঁধে কিউইদের হৃদয়ে।
ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি- বিশ্বকাপ মঞ্চে বরাবরই দুর্দান্ত নিউজিল্যান্ড। তবে শিরোপার আনন্দে কখনও উৎসব করা হয়নি তাদের। অতীত ইতিহাস পেছনে ফেলে নতুন আশায় নামতে যাচ্ছে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এবারও দলটির নেতৃত্বে কেন উইলিয়ামসন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেও দলের পরিস্থিতি বিবেচনায় আবারও নিতে হয়েছে নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব।
যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। চার প্রতিপক্ষ- আফগানিস্তান, উগান্ডা, পাপুয়া নিউগিনি ও অন্যতম আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রত্যেক গ্রুপ থেকে সেরা দুই দল যাবে সুপার এইট রাউন্ডে। কিউইদের জন্য গ্রুপ পর্বই হতে যাচ্ছে কঠিন পরীক্ষার মঞ্চ। আইসিসির দুই সহযোগী দেশ পাপুয়া নিউগিনি ও উগান্ডার বাধা সহজেই উতরে যাওয়ার কথা তাদের। তবে সমস্যায় পড়বে আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে।
কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানরা দুর্দান্ত দল। আফগানিস্তানও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে শক্তিশালী। দুই দলেই রয়েছে দারুণ কিছু খেলোয়াড়। তবে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে এই গ্রুপে ফেভারিট নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপের আগে তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে সবশেষ সিরিজ। পাকিস্তানের মাটিতে গিয়েছিল দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে। এরপরও পূর্ণশক্তির পাকিস্তানের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শেষ করেছে সমতায়। একদিকে বেঞ্চের পরীক্ষা সেরে নিয়েছে কিউইরা, অন্যদিকে আইপিএল দিয়ে মূল খেলোয়াড়রা ঝালিয়ে নিয়েছেন নিজেদের।
একনজরে:
অধিনায়ক: কেন উইলিয়ামসন।
কোচ: গ্যারি স্টিড।
ডাকনাম: ব্ল্যাক ক্যাপস, কিউই।
র্যাংকিং: ৫।
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ৮ বার (২০০৭, ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬, ২০২১, ২০২২)।
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: রানার্স-আপ ২০২১।
আগের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল অস্ট্রেলিয়া। এই বিশ্বকাপেও কিউইদের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। শিরোপার জয়ের সম্ভাবনাও উঁকি দিয়েছিল গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্সে। গ্রুপ-১ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিশ্চিত করেছিল সেমিফাইনাল। কিন্তু শেষ চারের লড়াইয়ে গিয়ে খেই হারায়। পাকিস্তানের কাছে হেরে বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।
নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ সূচি
৮ জুন: আফগানিস্তান (গায়ানা), ভোর ৫-৩০ মিনিট
১৩ জুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ (ত্রিনিদাদ), সকাল ৬-৩০ মিনিট
১৫ জুন: উগান্ডা (ত্রিনিদাদ), সকাল ৬-৩০ মিনিট
১৭ জুন: পাপুয়া নিউগিনি (ত্রিনিদাদ), রাত ৮-৩০ মিনিট
নজরে থাকবেন
কেন উইলিয়ামসন:
নিউজিল্যান্ডের সব ফরম্যাটের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। তিনি সরে দাঁড়ালে টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক করা হয় টিম সাউদিকে। কিন্তু ডানহাতি পেসার পথে রাখতে পারেননি। ফলে আবারও নেতৃত্বে ফেরানো হয় উইলিয়ামসনকে। এই ব্যাটারের নেতৃত্বেই আরেকটি বিশ্বকাপ খেলবে কিউইরা।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সেরা ব্যাটার হিসেবে বিবেচনা করা হয় উইলিয়ামসনকে। তার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ শিরোপার খুব কাছে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপদের। তার সামনে আরেকটি সুযোগ। তবে বিশ্বকাপে কিউইদের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করছে উইলিয়ামসনের পারফরম্যান্সের ওপর। ৩৩ বছর বয়সী তারকা কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরের প্রস্তুতি নিতে গিয়েছেন আইপিএলে। যদিও গুজরাট টাইটানসের জার্সিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
গ্লেন ফিলিপস:
২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড দলে অভিষেক। তবে গ্লেন ফিলিপস জাতীয় দলে নিয়মিত খেলছেন ২০২২ সাল থেকে। তিন ফরম্যাটে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন তিনি। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে তার কার্যকরী ব্যাটিং নিউজিল্যান্ডের বড় অস্ত্র। সময়ের দাবি মিটিয়ে যেমন ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারেন, তেমনি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে বাড়াতে পারেন রানের গতি। ১৪৩.২৯ স্ট্রাইকরেট নিয়ে বিশ্বকাপে নামতে যাচ্ছেন ফিলিপস।
ট্রেন্ট বোল্ট:
কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো ট্রেন্ট বোল্ট আছেন নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে। ৩৪ পেরিয়ে যাওয়া বাঁহাতি পেসার নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের নেতা। তার বিষাক্ত সুইং ও স্লোয়ারে পরীক্ষায় বসতে হয় ব্যাটারদের। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল খেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘প্রস্তুতি’ পর্ব সেরেছেন বোল্ট। নিজের দিনে যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি। বিশ্বকাপে বিধ্বংসী বোল্টকেই দেখতে চাইবে কিউই সমর্থকরা।
শক্তি
* কেন উইলিয়ামসনের অভিজ্ঞতা।
* দুর্দান্ত পেস আক্রমণ। নতুন বলের জুটি টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে আছেন লকি ফার্গুসন ও ম্যাট হেনরি।
* গত ১০ বছরে তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। সবশেষ ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা দলটির বেশিরভাগ খেলোয়াড় আছেন এবারের আসরে।
* শক্তিশালী মিডল অর্ডার। আছেন ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসের মতো পরীক্ষিত খেলোয়াড়।
দুর্বলতা
* আইপিএল খুব একটা ভালো যায়নি কিউইদের সেরা ক্রিকেটারদের। প্রস্তুতির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।
* একাই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন- এমন খেলোয়াড়ের অভাব।
* বড় ম্যাচে ব্যর্থতার অনেক উদাহরণ আছে তাদের।
ভবিষ্যদ্বাণী: সেমিফাইনাল
নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ফিন অ্যালেন, ডেভন কনওয়ে, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চ্যাপম্যান, ডারেল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, ইশ সোধি, টিম সাউদি।