রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১
The Daily Ittefaq

কমলগঞ্জে চায়ের টিলা খুঁড়ে বালুর বাণিজ্য

আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ০৩:২৯

দেশের সম্ভাবনাময়ী প্রাকৃতিক টিলাভূমি ও সম্পদ ধ্বংস করে অবৈধভাবে সিলিকা বালুর রমরমা বাণিজ্য চলছে। মাটি ও বালি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে বালু উত্তোলনের ফলে ধ্বংস হচ্ছে দেশের পাহাড়ি টিলা। উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে ইজারা না নিয়েও কমলগঞ্জের সুনছড়া ও কামারছড়ার গা ঘেঁষে চায়ের টিলা খুঁড়ে বালু উত্তোলনের কার্যক্রম চলছে নির্বিবাদে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সুনছড়া, কামারছড়া ও কালিছালি এলাকায় চায়ের টিলা খুঁড়ে দীর্ঘদিন ধরে সিলিকা বালু উত্তোলন করে ট্রাকযোগে পরিবহন করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র অব্যাহতভাবে বালু বিক্রি ও পরিবহন করছে। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চায়ের টিলা, বাগানের রাস্তা, চা বাগানের মধ্যবর্তী লোহার কালভার্ট, প্রাকৃতিক টিলাভূমি। এছাড়া চা-বাগানের উত্তোলিত চা-পাতা পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে আলীনগর চা-বাগান ব্যবস্থাপক মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে দুই দফা লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, সুনছড়া ও রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যবর্তী ছড়া বালু মহাল হিসেবে লিজভুক্ত না হলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাপকহারে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ছড়ার পার্শ্ববর্তী টিলা খুঁড়েও বালু উত্তোলন চলছে। বাগানের চা-পাতা পরিবহন ও অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সনের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন দ্বারা মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ৫১টি পাহাড়ি ছড়া সিলিকাবালু সম্পৃক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৯ টি অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। ইজারা গ্রহীতাদের অনিয়ন্ত্রিত ও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনের ফলে জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। এ ব্যাপারে ২০১৬ সনের ৮ মার্চ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন (নং-২৯৪৮/২০১৬) দায়ের করে। শুনানি শেষে ২১ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ১৯টি বালুমহালকে পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র (ইসিসি) ছাড়া পরবর্তী ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। সেই সঙ্গে ইজারাভুক্ত ছড়াসমূহ থেকে সকল প্রকার ড্রিল, ড্রেজার, বোমা মেশিন এবং বালু উত্তোলনে ব্যবহূত যান্ত্রিক মেশিনসমূহ জব্দ করার জন্য আদালত নির্দেশনা দেয়। কিন্তু স্থানীয় কয়েকটি প্রভাবশালী মহল পাহাড়ি ছড়া ও টিলা খুঁড়ে সিলিকা বালুর বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের লোকজনও ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।

আলীনগর চা-বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিষয়ে ইতিপূর্বে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অতিসম্প্রতি আবারও এসব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক অ্যাড. শাহ সাহেদা বলেন, আদালতের রায়কে অমান্য করে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আদালত অবমাননার শামিল। অধিকাংশ ছড়া চা-বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। প্রাকৃতিক সম্পদকে ধ্বংস করে বালু উত্তোলন করা যায় না। তাছাড়া ২০২৩ সালের বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী চা-শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য চা-বাগানের ভেতরে বালুমহাল লিজ দেওয়া অনুচিত।

কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুয়ান বলেন, সুনছড়া ও কামারছড়ায় কোনো ইজারা হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন জানান, ইতিপূর্বে অভিযান করে জরিমানাও করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি