মাজেদা খানম মুনা জামালপুরের একজন সাধারণ নারী ছিলেন। দরিদ্র বাবা-মা ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই তার বিয়ে দেন। দফায় দফায় স্বামীর বাড়ির যৌতুক আবদার রাখতে ক্লান্ত পিতা-মাতা। আর মাজেদা শারীরিক মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে এক সময় ঘর ছাড়েন। দরিদ্র বাবা-মা অপারগ আর প্রতিবেশীদের কটু কথায় অতিষ্ঠ মাজেদা এমন সময় পান স্ট্রেনথেনিং হাউজহোল্ড অ্যাবিলিটি টু রেসপন্ড টু ডেভেলপমেন্ট অপরচুনিটিস (সৌহার্দ্য) ৩ প্লাস অ্যাক্টিভিটিএর প্রশিক্ষণ, যা তাকে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধু মাজেদা নয় সাধারণ মেয়ে হতে চিকিৎসক হওয়া রেহানা খাতুন,কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া সবার গল্পটা একই ,তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে জীবন বদলে ফেলেছেন।
গতকাল সোমবার নগরীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ইউএসএইড এর অর্থায়নে ও কেয়ার বাংলাদেশ বাস্তবায়িত সৌহার্দ্য ৩ প্লাস অ্যাক্টিভিটি, স্থানীয় সেবাদানকারীদের (এলএসপি) গ্র্যাজুয়েশন (প্রশিক্ষণ উত্তীর্ণ) উদযাপনর অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়। সেলিব্রেটিং অ্যান্ড লঞ্চিং লোকালসার্ভিস প্রোভাইডারস নেটওয়ার্ক: সাপোর্টিং এ স্মার্টবাংলাদেশ’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কেয়ার বাংলাদেশ । এই অনুষ্ঠানে ‘উদ্যোক্তা তৈরি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ এর প্রশিক্ষিত স্থানীয় সেবাদানকারীর তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল স্থানীয়সেবা দানকারী ও বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা জোরদার করা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় সৌহার্দ্যের কর্মসূচি বেসরকারি খাতের সাথে সক্রিয়ভাবে স্থানীয় সেবাদানকারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করেছে। এই প্রকল্প প্রায় ২ হাজার ৩০০ স্থানীয় সেবাদানকারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। যা প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার পরিবারের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। এই প্রকল্প ৪৫০জন স্থানীয় সেবাদানকারীর জন্য উদ্যোক্তা তৈরি’ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৌহার্দ্য ৩ প্লাস প্রকল্পের সিনিয়র টিম লিডার-প্রোগ্রাম, আব্দুল মান্নান মজুমদার। তিনি স্থানীয় সেবা দানকারীদের ব্যবসায়িক কনেটওয়ার্ক বা এলএসপি বিজনেস নেটওয়ার্ক মডেলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন ও স্মার্টবাংলাদেশ তৈরিতে প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, আমরা খুবই খুশি যে এলএসপিরা রোগ, সঠিক টিকা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জানে। তারাই সৌহার্দ্য দ্বারা আলোকিত মানুষ। তাদের পুষ্টি এ বিষয়ে আরও অবগত হওয়া উচিত,যাতে অন্যরা তাদের অনুসরণ করতে পারে।
কেয়ার বাংলাদেশ এর কান্ট্রিডিরেক্টর রাম দাস বলেন, সৌহার্দ্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জনগণ তাদের জীবন-জীবিকার উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক উপকারভোগী বিশেষ করে নারীরা বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থান, টেকসই কৃষি ও বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেছে। যেহেতু সৌহার্দ্য ৩প্লাস প্রকল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই কেয়ার বংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যাংক, কর্পোরেট সেক্টর এবং সরকারকে এই সম্প্রদায়ের উন্নতির অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সৌহার্দ্য অ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি মার্কনসবা বলেন, আমরা সবাই মিলে শুধু মাত্র স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অবদান রাখছি না বরং টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতার পথও প্রশস্থ করছি। আসুন আমরা সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে এক সঙ্গে কাজ করি।
বিশেষ অতিথি কেয়ার-এর আঞ্চলিক ডিরেক্টরর রমেশ সিং বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন, কারণ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্থানীয় সেবাদানকারীরা সফলভাবে তাদের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। আমরা সাত ধরনের সেবাদানকারীর একটি নেটওয়ার্ক চালু করেছি যারা ভবিষ্যতে স্থানীয় ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে কেয়ার বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ অতিথি ইউএসএইড বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা কার্যালয়ের পরিচালক মুস্তাফা এল হামজা উই বলেন, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই এবং উদ্ভাবনী অংশীদারিত্ব ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় সেবা দানকারীদের এই সক্ষমতা উদযাপন করতে পারায় তিনি আনন্দিত।
অনুষ্ঠানে সৌহার্দ্য প্রকল্প "স্থানীয় সেবাদানকারী নেটওয়ার্ক" এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে,এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা স্থানীয় সেবাদানকারীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসবে। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সেবাদানকারীদের ভিজ্যুয়াল পরিচিতির জন্য “এলএসপি লোগো” এর উন্মোচন করা হয়। উল্লেখ্য যে, এই লোগোটি গাইবান্ধার মমিনুল ইসলাম নামক একজন স্থানীয় সেবাদানকারী তৈরি করেছেন, তিনি প্রায় ৩৫০ জন স্থানীয় সেবাদানকারীর সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। লোগো প্রতিযোগিতার বিজয়ী এবং দুইরানার্স-আপকে অনুষ্ঠানে চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ পরিচালক সৈয়দ মো. নুরুল বাসির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফিল্ড সার্ভিস উইং পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মো. ইকবাল মহসিন প্রমূখ ছিলেন।