বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১
The Daily Ittefaq

বিবিসির প্রতিবেদন

গণকবর আর লাশে ভর্তি আল শিফা হাসপাতাল, গন্ধে স্তব্ধ ফিলিস্তিনিরা

আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ২০:১৩

গাজা সিটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান শেষে ইসরায়েল গত ১ এপ্রিল সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর ধ্বংসস্তুপের মধ্যে লাশের গন্ধে স্তব্ধ ফিলিস্তিনিরা।

সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে হাসপাতাল চত্বরটিতে ৪টি গণকবর আবিস্কৃত হয়েছে যেখানে কয়েকশ’ মৃতদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি অনুসন্ধানী দল।

গাজায় গত আট মাসের যুদ্ধে বার বার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে হাসপাতালগুলো। ইসরায়েলের দাবি, গাজার হাসপাতালগুলোকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যদিও এ দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে হামাস।

কিন্তু গাজার একসময়কার সবচেয়ে বড় এবং সর্বোত্তম আধুনিক চিকিৎসা সুবিধাযুক্ত হাসপাতাল আল-শিফায় ইসরায়েল যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা বলতে গেলে সবচেয়ে নাটকীয়।

হামাস আল-শিফা প্রাঙ্গণে নতুন করে সংগঠিত হয়েছে এমন দাবি করে ইসরায়েল হাসপাতালটিতে দুই সপ্তাহের আকস্মিক অভিযান চালায়। ইসরায়েল সরকার এ অভিযানকে ‘সুনির্দিষ্ট এবং সার্জিক্যাল’ (বেসামরিক মানুষ ও অবকাঠামোর ক্ষতি ছাড়াই নির্দিষ্ট সামরিক লক্ষ্যে আক্রমণ) বলে বর্ণনা করেছিল।

এ অভিযানে ২শ’ সন্ত্রাসীকে হত্যার পাশাপাশি ৯০০ সন্ত্রাসীকে ধরা হয়েছে এবং কোনও বেসামরিক নাগরিকেরই মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেছেন ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র।

কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আল-শিফা প্রাঙ্গণে বালির মধ্য থেকে বেরিয়ে আসা একের পর এক পচা গলা মৃতদেহ ইসরায়েলের ওই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ফিলিস্তিনের এক সিভিল ডিফেন্স কর্মী, রামি দাবাবেশ গত ৮ মে বিবিসি-কে বলেন, “আমরা গণকবর খুঁড়েছি। সেখান থেকে পাওয়া বেশীরভাগ মরদেহেই পচন ধরেছে। সেগুলো শনাক্ত করা যাচ্ছে না”।

Getty Images A picture shows the destruction in the dialysis unit at Gaza's devastated Al-Shifa hospital

তিনি আরও বলেন, "আমরা নারী, শিশু এবং মাথাবিহীন মানুষের মৃতদেহ এবং শরীরের টুকরো টুকরো অংশ খুঁজে পেয়েছি।" ফরেনসিক সরঞ্জাম এবং বিশেষজ্ঞের অভাব থাকায় উদ্ধারকর্মীরা দেহাবশেষ শনাক্ত ও নথিভুক্ত করতে ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করেছে।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক, মোহাম্মদ মুগির বিবিসি-কে জানান, "কিছু মৃতদেহে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের চিহ্ন, বাঁধার চিহ্ন, মাথায় গুলির চিহ্ন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।"

আল-শিফায় সম্প্রতি পাওয়া মৃতদেহগুলোর মধ্যে কিছু মৃতদেহ ইসরায়েলের সর্বশেষ সামরিক অভিযানের সময় মারা যাওয়া রোগীদের। অনুসন্ধানকাজে নিয়োজিত এক চিকিৎসাকর্মী বলেছেন, কোনও কোনও মৃতদেহে ক্যাথেটার লাগানো ছিল।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজার আল-শিফা এবং নাসের হাসপাতালে গণকবর আবিষ্কারের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেখানকার অভিযানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ খতিয়ে দেখতে তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মিলে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ইত্তেফাক/এনএন