ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণে নারায়ণগঞ্জে সাড়ে ৩৫ হেক্টোর জমির সবজি নস্ট হয়ে গেছে। এতে দেড় কোটি টাকার উপরে ক্ষতির শিকার হয়েছেন সবজি চাষিরা। এ ছাড়া সাড়ে ৫ হেক্টর জমির আউশের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে বোরো ধান ও সোনারগাঁয়ের কদমী লিচু ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার আগেই চাষিরা সংগ্রহ করে ফেলায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে তারা রক্ষা পেয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, জেলায় ৬ হাজার ১২০ হেক্টোর জমিতে সবজি চাষ হয়। এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৮১১ হেক্টোর জমির সবজি আক্রান্ত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৩৫ দশমিক ৫ হেক্টোর জমির ৬৬৮ মেট্টিক টন সবজি। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৬৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। বিপুল পরিমান এই সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ১ হাজার ২৪৫ জন কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, জেলার ৫টি উপজেলায় বছরে সবজির চাহিদার পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ মেট্টিক টন। উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৭ মেট্টিক টন সবজি। এর মধ্যে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৩ মেট্টিক টন শীতকালীন সবজি ও ১ লাখ ২৫ হাজার ১৪ মেট্টিক টন গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে সদরের দু’টি ইউনিয়ন, বন্দরে অল্পকিছু সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে বেশি সবজি চাষ হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ধমকা হাওয়ায় পূর্বাঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সবজির মাঁচা পড়ে গেছে। এতে করে লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, ঢেড়ষ এর ক্ষতি হয়েছে।
গন্ধবপুর ইউনিয়নের কৃষানী রোকেয়া বেগম বলেন, আমার ২ একর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এলাকার সবারই সবজির ঝাকা পড়ে গেছে।
৩০০ ফুট এলাকার চাষী মোতাহার আলী জানান, আমার সবজির মাঁচা ভেঙে পড়ে গেছে। ঢেড়ষ ক্ষেত ক্ষতি হয়েছে। তবে আমি ও এলাকার লোকজন মিলে পড়ে যাওয়া সবজিগুলো সংগ্রহ করে কমদামে বিক্রি করে দিয়েছি। এতে করে এ বছর আমার লাভ হবেনা। তবে লোকসান ঠেকিয়েছি।
আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচগাঁও, বিনাইরচর, রসুলপুর ও আশপাশ গ্রামের সবজি চাষিরা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের অর্ধেক সবজি নষ্ট হয়েছে। আউশের বীজতলা তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে সবজির মাঁচা পড়ে গেছে। আমরা হাল ছাড়িনি। পড়ে যাওয়া সবজি সংগ্রহ করে বিক্রি করে দিয়েছি।
এদিকে, সদর উপজেলার বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নের কৃষকরা জানায়, সবজি ক্ষেত ক্ষতি হয়েছে। ঢেড়ষ, ডাঁটা, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা ও মিষ্টি কুমড়া নষ্ট হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি জমে গিয়েছিল।
সদর উপজেলার জালকুড়ি এলাকার কয়েকজন ক্ষুদ্র সবজি চাষি বলেন, আমরাতো এমনিতেই অল্প চাষবাষ করি। মাঁচা ভেঙে যাওয়ায় তেমন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে আমাদের ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।