ঈদুল আজহা সামনে রেখে নাটোরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। নাটোর শহরের তেবাড়িয়ায় প্রতি রবিবার বসে জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট। এছাড়া বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট শুক্রবার, সিংড়া ফেরিঘাটে সোমবার ও বৃহস্পতিবার, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় এবং গোপালপুর উপজেলার মধুবাড়ীতে বসে গরু-ছাগলের হাট। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে করোটা, গোবিন্দপুর, গুনাইখারা, হাতিয়ান্দহ, জোনাইল হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে। ইতিমধ্যে নাটোরের বিভিন্ন হাটে, খামারে ও অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাটোরে ১৮ হাজার ৪৫০টি খামারে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২২৭টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তেবাড়িয়া হাটে আসা খামারি আবু হানিফ জানান, এ বছর কোরবানির জন্য তিনি তিনটি ষাড় গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। শহরের বনবেলগরিয়া এলাকার সুজন জানান, তিনি ছয়টি ষাড় গরু প্রস্তুত করেছেন।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় কোরবানির চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত ২ লাখ ২৬ হাজার ১৮৫টি পশু সারা দেশে বিক্রির জন্য চলে যাবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
চাটমোহরে হাটে ক্রেতার ভিড়
চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনার চাটমোহর উপজেলার কোরবানির পশুর হাটে বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। উপজেলার অমৃতকুণ্ডা, নতুন বাজার পশুর হাট, ছাইকোলা, শরত্গঞ্জসহ অন্যান্য হাটে গরু-ছাগলের আমদানি বাড়ছে। বিক্রি হচ্ছে কম। ক্রেতারা এখন শুধু দরদাম করছেন। এই সপ্তাহের শেষ দিকে হাটগুলোতে বেচাকেনা বাড়বে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, হাটের ইজারাদারের লোকজন অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা নেই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেদুয়ানুল হালিম জানান, কোরবানির হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে কোরবানির পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সোমবার দুপুরে এক মতবিনিময় সভা করে জেলা প্রশাসন। এ সময় অতিরিক্ত টোল আদায় করার বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সাবধান করা হয়েছে হাট-বাজার ইাজারাদারদের। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী। এ সময় বক্তব্য রাখেন জয়পুরহাট পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান, আক্কেলপুর পৌর মেয়র শহীদুল আলম চোধুরী, পাঁচবিবি পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান, পাঁচবিবির হাট ইজারাদার আবদুল হাকিম মন্ডল, হাট ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা প্রমুখ।
‘নাতিবাবুর’ ওজন ৪৩ মণ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছোট্ট বাছুরকে চার বছর ধরে লালনপালন করে বিশালাকৃতির ষাঁড়ে পরিণত করেছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঠান্ডু প্রামাণিক। এখন ষাঁড়টির ওজন ৪৩ মণ। নাতির মতো আদরে বড় করে তুলেছেন বলেই ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘নাতিবাবু’। দানবাকৃতির ‘নাতিবাবু’ দেশের সবচেয়ে বড় ষাঁড় বলে ধারণা স্থানীয়দের। এদিকে সাড়ে ৯ ফুট লম্বা ও ছয় ফুট উঁচু হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান শংকর জাতের এই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। ঠাণ্ডু প্রামাণিক বলেন, ‘কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর ব্যাপারীরা এসে দেখে যাচ্ছেন গরুটি। ১৫ লাখ টাকা হলে বেচে দেব।’
নীলফামারীতে উদ্বৃত্ত থাকবে লক্ষাধিক পশু
সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে নীলফামারীতে এবার প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০১টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৯টি। চাহিদার চেয়ে এবার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯২টি পশু অতিরিক্ত (বেশি) রয়েছে জানায় জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক ও সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার রায় জানান, এ বছর খামার ও কৃষক পর্যায়ে গবাদি পশু লালন-পালন করা হয়েছে কোরবানির জন্য। আশা করি, এই ঈদে গবাদি পশুর সংকট পড়বে না।
স্থানীয় পশুতে মিটবে সেনবাগের চাহিদা
সেনবাগ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, স্থানীয় খামারিদের পালন করা পশু দিয়েই সেনবাগের কোরবানির পশুর চাহিদা মিটবে। উপজেলায় এবার ১২ হাজার ৫০০টি গরু চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১৩ হাজার ৪০২টি গরু। আর ছাগল বা ভেড়া ৩ হাজার ৮৯৬টির বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৪ হাজার ৫৬৫টি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ জানান, সেনবাগ উপজেলায় ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন খামারে যে পশু প্রস্তুত হয়েছে, তা দিয়েই সেনবাগের চাহিদা মেটানো সম্ভব। খামারগুলোতে এখন পর্যন্ত গরু, ছাগল বা ভেড়াগুলো ভালো রয়েছে।
প্রতিদিন ২৫ কেজি খাবার লাগে ‘প্রিন্স মামুনের’
টেকেরহাট (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, গরুর নাম ‘প্রিন্স মামুন’। ১২ ফুট লম্বা এবং সাড়ে ৬ ফুট প্রস্থ গরুটির ওজন ২৫ মণ। প্রতিদিন তিন বেলায় খাবার লাগে ২৫ কেজি। প্রিন্স মামুন নামের গরুটি জেলার সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি স্থানীয়দের। গরুটি দেখতে প্রতিদিনই মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা এলাকার আয়উব আলী ব্যাপারীর খামারে ভিড় করছেন দূরদূরান্তের ক্রেতারা। আইউব আলী গরুটির দাম হেকেছেন ১৫ লাখ টাকা। শিবচরের বাঁশকান্দি থেকে আসা ক্রেতা রুবেল মুন্সি বলেন, গরুটি দেখে ভালোই লেগেছে। চাহিদামতো দামে বিক্রি হলে এটি কিনে নিয়ে যাব।