প্রেম অথবা বিয়ে যেকোনো রিলেশনশিপে বিচ্ছেদ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সম্পর্কে ভাঙা-গড়ার খেলা চলবেই, এটাই জগতের নিয়ম। মতের অমিল, ইগো কিংবা নানা কারণেই কাচের মত সম্পর্কও ভেঙে যেতে পারে হঠাৎই।
আবার অনেকেই একটি টক্সিক বা দমবন্ধ লাগা রিলেশন থেকে নিজেকে মুক্ত করে ফের অন্য কারও সঙ্গে নতুন রিলেশনে জড়াতেই পারে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরে আর একটা সম্পর্ক শুরু করলেও আগের সম্পর্ক বা প্রাক্তনকে ভুলতে পারে না।
নতুন সম্পর্কে ভালো থাকলেও হয়তো অবচেতন বা অজান্তেই আগের সম্পর্কের স্মৃতিতে ডুবতে থাকে। আর একটা স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে অতীত বা প্রাক্তনের স্মৃতিচারণ করেন, আবার অনেকে বর্তমানের সঙ্গে প্রাক্তনের তুলনা করেন যা খুবই বোকামি। পরবর্তীতে এটি সম্পর্কে অনেক কঠিন পরিণতির জন্ম দেয়। এর মাধ্যমে সঙ্গী একধরনের অসুস্থতার শিকারও হতে পারেন।
যেহেতু বর্তমান সোশাল মিডিয়ার যুগ। আর এযুগে কারও কিছুই অজানা থাকে না। কারও সঙ্গে মুখোমুখি দেখা না হলেও, তাকে দেখতে বা ধারণা পাবার জন্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ঢু মারেন সহজেই। আর পার্টনারের প্রাক্তনের প্রোফাইলে উঁকি দেওয়ার আগ্রহটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে আগ্রহ যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় তখন মনোবিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে অসুস্থতা বলে চিহ্নিত করেন। আর এই অসুস্থতার নাম 'রেবেকা সিনড্রোম'।
যেকোনো বিয়ে কিংবা প্রেমে নারী বা পুরুষের মধ্যে অতীত ছেড়ে আসার বিষয়টি থাকবে তাদের নতুন জীবন গুছাতে কিছুটা বাড়তি যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ নতুন সম্পর্কের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কের তুলনার বিষয়টি অনেকসময় কেউ না চাইলেও চলে আসে অবচেতন ভাবেই।
আর তখনই দ্বিতীয়ার মধ্যে প্রথমাকে নিয়ে একটা প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবনা শুরু হয় এবং সেই ভাবনা এক সময়ে মানসিক অসুখে পর্যবসিত হতে থাকে।
শুরু করে সঙ্গীর প্রাক্তনের প্রোফাইলে ঘুরাঘুরি। অবশ্য সঙ্গীর প্রতি সন্দেহের বশে প্রাক্তনের প্রোফাইলে নজরদারি চালান, তা নয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসাই 'রেবেকা সিনড্রোম' অসুখটিকে ডেকে আনেন। আর এই অভ্যাসে নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে দিন দিন।
এমনকি রেবেকা সিনড্রোমে ভুগতে থাকা ব্যক্তি এক সময়ে আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করেন। এবং এক সময়ে অবসাদগ্রস্তও হয়ে পড়েন।
মূলত 'রেবেকা সিনড্রোম' মনোরোগটির নামের পেছনে জড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত এক সাহিত্যকর্মের নাম। ব্রিটিশ সাহিত্যিক দাফনে দু’ মরিয়েরের উপন্যাস ‘রেবেকা’র নামানুসারেই এই বিশেষ মনোবৃত্তিটিকে চিহ্নিত করা হয়।
১৯৩৮ সালে ‘রেবেকা’ প্রকাশিত উপন্যাসে মাক্সিম ডে উইন্টার নামর এক ধনাঢ্য ব্যক্তির বৈবাহিক জীবন উঠে এসেছে। রেবেকা ছিল মাক্সিমের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর নাম। কথকের সঙ্গে মাক্সিমের বিয়ের এক বছর আগে সে এক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়। মাক্সিমের এস্টেটের হাউসকিপার মিসেস ডানভার্স ক্রমাগত নববধূর সঙ্গে প্রয়াত রেবেকার তুলনা শুরু করে। প্রকাশ্যে সে মনিবের নবোঢ়া পত্নীকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থাও করতে শুরু করে। বার বার মনে করিয়ে দিতে থাকে, রেবেকার সৌন্দর্যের কাছে সে কিছুই নয়।
কাহিনীর কথক নারীটি যখন তার স্বামীর এস্টেটে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়, তখন মিসেস ডেনভার্স তাকে জানায়, রেবেকার এস্টেট পরিচালনার সঙ্গে তার তুলনাই চলে না। ডেনভার্সের এই তুলনা কথকের আত্মবিশ্বাসকে আহত করে।
'রেবেকা সিনড্রম' থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে মনোবিশেষজ্ঞ শাহনীলা তৈয়ব কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
- কখনোই প্রাক্তনের সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীর তুলনা না করা যাবে না। অতীত সম্পর্কের কোনো স্মৃতিচারণ বর্তমানের সঙ্গে না করা। এতে বর্তমান সঙ্গীর মনে কষ্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
- নতুন সঙ্গীর কাছে প্রাক্তনের করা কাজ বা অভ্যাসগুলোর আশা না করা। অর্থাৎ, প্রাক্তন যেটা করত, বর্তমানকেও সেটাই করতে হবে, এমন মনোভাব না থাকাই ভালো।
- প্রাক্তনকে ভুলে নতুন সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করতে হবে, আর নতুনকে নিয়ে জীবন উপভোগের আশায় মুভ অন করার মানসিকতা রাখতে হবে।