শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

মাংসের জন্য কেন হাতি-জলহস্তী-জেব্রা হত্যা করা হচ্ছে?

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৪৮

দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় হাতি, জেব্রা ও জলহস্তীসহ ৭০০ টিরও বেশি বন্যপ্রাণী হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত ক্ষুধার্তদের মাংস সরবরাহের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে নামিবিয়ার পরিস্থিতিকে 'মানবিক সংকট' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নামিবিয়ায় প্রাণীদের অভয়ারণ্য। ছবি: সংগৃহীত

দেশটির পরিবেশ, বন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত সোমবার (২৬ আগস্ট) ঘোষণা করেছে, ৮৩টি হাতি, ৩০টি জলহস্তী, ৬০টি মহিষ, ৫০টি ইমপালা, ১০০টি নীলগাই এবং ১০০টি জেব্রা হত্যা করা হবে।

ইতোমধ্যে সরকারি ত্রাণ কর্মসূচির জন্য ১৫৭টি বন্যপ্রাণীর ৫৬ হাজার ৮৭৫ কেজি মাংস সংগ্রহ করা হয়েছে। যেখান থেকে প্রাণী নিধন করলে জনগণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না, সেভাবেই কাজ চলছে।

খরার ফলে নামিবিয়ার প্রায় ৮৪ শতাংশ খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে গেছে। জাতিসংঘ বলেছিল, গত জুলাই থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ২৫ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।

নামিবিয়ায় প্রাণীদের অভয়ারণ্য। ছবি: সংগৃহীত

দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কাজটি (প্রাণী হত্যা) এখন প্রয়োজনীয়। আমাদের সাংবিধানিক আদেশের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ- কেননা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নাগরিকদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করার নিয়ম।

নামিবিয়ায় খড়া ও এর প্রভাব

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা চলছে। এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, ফেব্রুয়ারিতে যখন সাধারণত বর্ষা হয়, তখন এই অঞ্চলে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের ২০ শতাংশেরও কম বৃষ্টি হয়। নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, মালাউই ও জাম্বিয়াও খরার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

প্রতিবেশীদের মতো নামিবিয়া কৃষি ও পশুসম্পদের উপর নির্ভরশীল। কৃষি ও পশুসম্পদের বিকাশের জন্য বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি বেশ কয়েকটি খরা রেকর্ড করেছে, যা খাদ্য উত্পাদনকে প্রভাবিত করেছে। কর্তৃপক্ষ ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনবার খরার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

জাতিসংঘ বলেছে, বর্তমান খরায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুও ডেকে আনছে। খরার কারণে নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতার ঝুঁকিও বাড়ছে। যেসব নারী ও মেয়ে সাধারণত তাদের পরিবারের জন্য পানি নিয়ে আসে, তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে, যার ফলে তাদের লাঞ্ছনার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেরার মতো রোগও ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক পরিস্থিতি মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। কারণ মানুষ এবং প্রাণী জল এবং স্থল সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

ইত্তেফাক/এসকে
 
unib