সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বশেমুরবিপ্রবি ট্রেজারারের গাড়ি বিলাস 

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৬

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কেনা হয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। চলতি বছরের জুন মাসের ক্রয়াদেশের চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তৎকালীন ট্রেজারার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মো. মোবারক হোসেন ও উপ-উপাচার্য সৈয়দ শামসুল আলমের জন্য এ দুটি গাড়ি কেনা হয়। তাদের ব্যবহার করার মতো গাড়ি থাকা এবং নতুন গাড়ি ক্রয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে গাড়িগুলো কেনা হয়। পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য। তবে আন্দোলনস্থল থেকে আগেই বের হয়ে যাওয়ায় পদত্যাগ করতে হয়নি ট্রেজারারকে। পূর্ববর্তী গাড়িসহ দুইটি গাড়িই এখন তিনি ব্যবহার করছেন।


এদিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় স্থগিত, হ্রাসকরণ ও বিদেশভ্রমণ সীমিতকরণ করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-আয়ঃশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কতিপয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং কোন খাতে কত ব্যয় করতে পারবে সেটা উল্লেখ করে দেওয়া হয়। 


কিন্তু এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বশেমুরবিপ্রবিতে ২ কোটি ৯১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে সাদা রঙের মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স স্পোর্ট জিপ কেনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী উপাচার্য দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও অর্থ দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে সময় ট্রেজারার ও উপ-উপাচার্যের চাপে গাড়ি ক্রয় করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও পরিপত্রের খ(৩) নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে সব ধরনের গাড়ি কেনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ স্থানীয় এক কর্মচারী নেতা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তির ফান্ডের টাকা থেকে এই গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। তবে অর্থ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ২টা গাড়ি সরাসরি স্টুডেন্টদের ভর্তি ফান্ড থেকে কেনা হয়নি। সিকিউরিটি মানি থেকে ধার হিসেবে নেওয়া হয়েছে যা পরবর্তীতে সিকিউরিটি মানিতে পরিশোধ করে দিতে হবে। যেহেতু সরকারের নিষেধ অমান্য করে গাড়ি দুটি কেনা হয়েছে, সেহেতু সরকার থেকে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ না থাকায় পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফান্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফান্ড থেকেই গাড়ির টাকা শোধ করতে হবে।


এ বিষয়ে জানতে বশেমুরবিপ্রবি ট্রেজারার ড. মো. মোবারক হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

ইত্তেফাক/এসএএস