বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ঘূর্ণিঝড় দানা

কক্সবাজারের আকাশে মেঘ-রোদ্দুর খেলা, সাগর উত্তাল

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে সমুদ্রবন্দর সমূহে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার পর বুধবার ভোর হতে রাত অবধি মেঘাচ্ছন্ন ছিল কক্সবাজারের আকাশ। উপকূলে চলেছে হালকা বৃষ্টিপাতও। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল হতে মেঘ-রোদ্দুর খেলা চলছে আকাশে। তবে, চলমান সংকেতের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। বেলাভূমি ও তীরে আছড়ে পড়ছে বড় ঢেউ।

বেলাভূমিতে দায়িত্বরত সি সেইফ লাইফ গার্ডের সিনিয়র কর্মকর্তা মো. ওসমান গণি বলেন, বন্দর সমূহে সতর্কতা সংকেত বাড়ার পর সন্ধ্যা হতে সাগরের ঢেউয়ে উত্তালতা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও একই প্রভাব রয়েছে। তবে, আকাশে মেঘাচ্ছন্নতার পরিবর্তে মেঘ-রোদ্দুর খেলা চলছে। সে বিমোহিত রূপ দেখতে অগণিত পর্যটক বেলাভূমিতে এসেছেন। অনেকে গতকালের মতো ঢেউয়ের পর ঢেউ মাড়িয়ে গোসলে মত্ত আছেন।

তিনি আরে বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল হওয়া সাগরে যেকোনো ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে জলে নামাদের সতর্কভাবে থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও লাইফ গার্ডরা যৌথভাবে এ মাইকিং করছে। অনেকে মাইকিংও গায়ে না মাখায় বিপদ এড়াতে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, বুধবার ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ভোর হতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল এবং সন্ধ্যা হতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। এখন বৃষ্টি নেই, আকাশে এই মেঘ, এই রোদ খেলা করছে। এরপরও প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য দুর্গতি এড়াতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। 

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৯ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারসহ চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৫৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো উপরিভাগের বাতাসের গতিবেগ। ঘূর্ণিঝড়ের দিক মূলত নিয়ন্ত্রণ করে সেই বাতাস। প্রায় ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঝড়টির প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে। হতে পারে দমকা হাওয়া ও ঝড়োবৃষ্টি।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে প্রাক-বর্ষা মৌসুম (এপ্রিল-মে) ও প্রি-বর্ষা মৌসুম (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) এসময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। ১৮৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মধ্যে ১৯টি ঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করা ঝড়গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের উপর দিয়ে গিয়েছে। গত বছরই বছরের এ সময়ে তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। গত বছরের অক্টোবরে ‘হামুন’, নভেম্বরে ‘মিধিলি’র পর ডিসেম্বরে ‘মিগজাউম’ নামের তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল। চলতি মাসের আবহাওয়া দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও এক থেকে তিনটি লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলা হয়েছিল। এদের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে বলা হয়। ইতোমধ্যে একটি নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করেছে।

ইত্তেফাক/এএইচপি