সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

চোখের সামনেই পুড়ে ছাই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন 

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২৯

বন্ধুর ফোনকলে ঘুম ভাঙে ফরহাদের। ওপার থেকে শোনা গেল স্টেশনে আগুন লেগেছে। দেরি না করে দ্রুত রওনা হয় স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু যা হবার তা হয়েই গেছে। সদ্য উঠানো স্বপ্নের দোকানটি ততক্ষণে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। 

আকাশসম স্বপ্ন ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ফরহাদ ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইচ্ছা ছিল পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করে নিজের খরচ নিজেই চালাবেন। কিন্তু তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ টিউশনির বাজার ও টিউশন মিডিয়ার দৌরাত্ম্য তাকে বাধ্য করে উদ্যোক্তা হতে।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের বন্ধু খাদিজা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ফরহাদ হোসেন গত মাসের শেষ দিকে নিজেদের জমানো টাকা ও পরিবারের সহায়তা নিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের স্টেশন সংলগ্ন একটি দোকান কিনেন। ভালোবেসে দোকানের নাম দেন 'নোঙর'। ইচ্ছা ছিল চলতি মাসের ২০ তারিখে উদ্বোধন করবেন দোকানটি। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সাজানো দোকানটিকে ধ্বংসস্তূপে দেখে চোখের পানি মুছতে হল রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনকে। 

শনিবার (৯ নভেম্বর) বেলা দশটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন সংলগ্ন দুইটি দোকানে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা দুটি দোকানকেই ভস্ম বানিয়ে দেয়। 

নোঙর ছাড়া অন্য দোকানটিও ছিল বিশ্ববিদ্যালয়েরই অপর দুই শিক্ষার্থীর। ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের দুই বন্ধু রাব্বি তালুকদার ও জাহিদুল ইসলাম শখের বশেই দুই বছর আগে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় করে দিয়েছিলেন ফাস্ট ফুডের দোকানটি। নাম রেখেছিলেন 'স্টেশন জ্যাম'। চলতি মাসের ২০ নভেম্বর তাদের  দুই বছর উদযাপন করার কথা ছিল কিন্তু তা আর হলো না! নিজের চোখেই দেখতে হলো উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটি। 

ফরহাদ হোসেন ও রাব্বি তালুকদারে বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে ছোটখাটো যে কর্মসংস্থানগুলো তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাতে সেগুলো নিয়মিত তদারক করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা যাতে  নিশ্চিত হয়। এ ছাড়াও যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করা হয় যাতে পরবর্তী সময়ে কোন ক্ষুদে উদ্যোক্তার স্বপ্নগুলো চুরমার হয়ে না যায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসে। আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার আগে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। ওই দোকানে কেমিক্যাল ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

গতকাল এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে মারধরের সঙ্গে আগুনের ঘটনার যোগসূত্র আছে কিনা জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, স্টেশন এলাকায় যুবলীগের হানিফ বাহিনী আগে একটা দোকান ভাঙচুর করেছে। আমরা কোনো ঘটনাকেই সন্দেহের বাইরে রাখছি না।

ইত্তেফাক/এমএএস