ক্রীড়াবিদদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট অলিম্পিক গেমস। এই টুর্নামেন্টে যারা পদক জিতে তারা সারাজীবন সেটি লালন-পালন করেন। বড় কোনো আঘাত না লাগলে এ পদকের বিবর্ণ হয় না তবে গেল আগস্টে প্যারিসে শেষ হওয়া অলিম্পিক গেমসের চার মাস না যেতেই যেন বদলে গেছে পদকের চেহারা এ নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে সমালোচনা। পদক জয়ী কয়েক জন ক্রীড়াবিদ তো বিবর্ণ হওয়া পদকের ছবি তুলে হাস্যরস করে বলেই দিয়েছে 'এটা মনে হয় কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি'।
সবশেষ প্যারিস অলিম্পিক গেমসে পদক জয়ীদের অনেকেই পদকের মান নিয়ে গেল কয়েক মাসে বেশ কয়েক বার অভিযোগ তুলেছে। তবে সম্প্রতি ঐ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে দুই ফরাসি ব্রোঞ্জ পদক জয়ী। অন্যদের মতো তারাও পদকের মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। পুরুষদের ৪*১০০ মিটার মিডলে রিলেতে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন ক্লেমেন্ট সেচি এবং ইয়োহান এনডয়ে-ব্রোয়ার্ড। সম্প্রতি তারা তাদের পদকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করে অসন্তোস প্রকাশ করেছে। এ সময় তারা এই পদকের আস্তরণকে 'কুমিরের চামড়া' সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ইয়োহান এনডয়ে-ব্রোয়ার্ডতো মজা করে ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্সের একটি পদকের সঙ্গে তার এই পদকের তুলনাও করেছেন। তার পরই সারা বিশ্ব জুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। এই দুই ক্রীড়াবিদের আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্কেটবোর্ডার নিযাহ হাস্টন, ফেন্সার নিক ইটকিন এবং রাগবি খেলোয়াড় ইলোনা মাহের তাদের পদক দ্রুত বিবর্ণ হওয়ার ছবি শেয়ার করে প্রথম এটার মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছিল। ঐ সময় হাস্টন জানিয়েছিল, তার পদক মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই রূপ হারিয়ে বিবর্ণ হতে শুরু করেছিল। বলেছিলেন, 'পদকগুলো দেখতে ভালো লাগলেও কয়েকদিন পর এগুলো নষ্ট হতে থাকে। গুণমান উন্নত করা প্রয়োজন।'
ব্রিটিশ ডাইভার ইয়াসমিন হার্পারও জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই তার পদক কিছুটা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। বলেছিলেন, 'আমার মনে হয় এটা পানি বা কোনো স্পর্শ পাওয়ায় এটা কিছুটা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে, যদিও আমি নিশ্চিত নই।' তবে এটি নিয়ে তিনি তেমন চিন্তিত নন বলেও জানিয়েছিল, কারণ রূপ হারালেও এটি এখনো একটি পদকই। এর আগে পদক নিয়ে প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, পদক ডিজাইন করেছে ফরাসি বিলাসবহুল জুয়েলারি ব্র্যান্ড শোমে।
প্রতিটি পদকে আইফেল টাওয়ারের পুরোনো লোহার অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। স্বর্ণপদকগুলো বেশির ভাগই সোনার প্রলেপসহ রৌপ্য দিয়ে তৈরি করা হয়। ব্রোঞ্জ পদকগুলো সাধারণত তামা, দস্তা এবং টিনের মিশ্রণ হয়। বাতাস এবং আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে ব্রোঞ্জ প্রাকৃতিকভাবে জারিত হয়। ব্রোঞ্জ কত দ্রুত হ্রাস পায় তা খাদে ধাতবগুলোর অনুপাতের উপর নির্ভর করে, যদিও সস্তা ধাতুগুলো প্রায়শই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করে।
এই কারণে অল্প দিনে পদকগুলো বিবর্ণ রূপ ধারণ করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও প্রথমবার পদকের মান নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, কোনো পদকের ক্ষতি হলে তা প্রতিস্থাপন করা হবে। তবে এবার ফের বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় তাদের উপর এ নিয়ে খানিকটা চাপ যে বাড়বে তা অনুমান করাই যায়।