শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

নভেম্বরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

নভেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মে মাসের ৭.৫৫ শতাংশের পর সর্বনিম্ন

আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:০০

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আর অর্থনীতির ধীর গতিতে বেসরকারি খাতে ব্যাংক-ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে। নভেম্বরে এ হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারির মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বেসরকারি খাতের ঋণের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, মূলত জুলাই-আগস্ট আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরও কমতে থাকে। গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাসে (আগস্ট) তা নামে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে।

পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ; যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে।

সরকার পতনের পর নতুন নতুন নীতিমালা, শ্রমিক অসন্তোষ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনীতিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা, মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতিসহ নানা কারণে বিনিয়োগে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার যে নীতি ঠিক করেছে, ঋণপ্রবাহের এই প্রবৃদ্ধি তারও নিচে নেমে গেল। সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না অনেক ব্যবসায়ী। এ কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন তারা। ব্যবসায়ীরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন। রাজনীতি ও অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেক জায়গায় গ্যাস-সংকট রয়েছে। তাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই নতুন বিনিয়োগে অনেকটা শ্লথ এসেছে।

তারা বলছেন, ব্যাংক-ঋণে সুদের হার বেড়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিলে খরচও বেড়ে যায়। আবার ব্যবসা করার জন্য পরিবেশ উপযুক্ত মনেও করছেন না তারা। যে কারণে ব্যাংক-ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে কমেছে। তাদের মতে, এখন ঋণপ্রবৃদ্ধি কম হলেও সামনে বাড়বে।

উদ্যোক্তারা জানান, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করছেন কম। তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চান। ব্যাংক-ঋণে সুদের হার ১৫ শতাংশের বেশি। তাতে কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যায়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেন ব্যবসায়ীরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেলে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণের গতি। অবধারিতভাবে তার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে।

একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, চলমান অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ সুদের হার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন ঋণের চাহিদা, বিশেষ করে মেয়াদি ঋণের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ সুদের হারে বিভিন্ন ঋণ দিচ্ছে। তিনি জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেয়াদি ঋণ এবং বাণিজ্যিক অর্থায়নের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় আমদানি এখনো কম রয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম
 
unib