বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেছে কি না জানা নেই। বিসিবির সভাপতিকে যেভাবে কটাক্ষ করা হয়েছে তা আর কখনো হয়নি। বাফুফে কিংবা বিসিবির সভাপতি পদ দুটি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। সবচেয়ে সম্মানজনকপদ। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে এ পদে আসীন হতে হয়। ফারুক আহমেদ বিসিবির সভাপতি হয়েছেন সকল নিয়ম মেনে।
ফারুকে যেভাবে হেনস্তা করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এটা লজ্জাজনক। বিসিবিতে কিভাবে আপনি সভাপতি হয়েছেন সেটা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কেউ প্রশ্ন তুলে সবার সামনে হেয় করার সুযোগ নিতে পারেন না। এ ধরনের নজীর নেই। এসব ঘটনা গত কয়েক দিন ধরে ক্রীড়াঙ্গানের সবার মুখে মুখে। চাপা ক্ষোভ চলছে বিসিবির পরিচালকদের মধ্যে কেউ কথাও বলছেন না। সবার মুখে নিশ্চুপ থাকার আঙ্গুল। টু শব্দটি কেউ করছেন না।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই আবার নতুন ঘটনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এটাও ঐ একই দিনের ঘটনা। মনোমালিন্য হয়েছে বিসিবি সভাপতি ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মাঝে। তবে প্রকাশ্যে আসতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছে। তবে যখনই প্রকাশ পেয়েছে তারপরই হইচই পড়ে যায় ক্রিকেট পাড়ায়। যদিও সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন নিজেদের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
সম্প্রতি শোনা যায় বিসিবির পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন ফাহিম। তিনি জানান বিপিএল চলাকালীন সভাপতির রুমে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সামনেই তাকে অপদস্ত করেছেন ফারুক আহমেদ। 'ইউ অ্যাকটিং লাইক ফানি? বিসিবি প্রেসিডেন্ট হতে চান, আসেন বানায় দেই' গলা উচিয়ে এমন সব উত্তপ্ত বাক্য বলেছেন বোর্ড প্রধান।
সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিসিবির এই পরিচালক। তিনি বলেন, 'সভাপতির সেই মন্তব্য আমি পুনরায় বলতে চাই না। তবে সেটি আমাকে খুবই আশাহত করেছে। এতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সভাপতির আমাকে নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। আমি জানি না কেন তিনি আমাকে নিয়ে এতগুলো মানুষের সামনে এমন মন্তব্য করলেন। আমি বেশ অবাক হয়েছি এটাতে। আর স্বাভাবিক ভাবেই আমি তার কাছ থেকে এমন একটা মন্তব্য মোটেও আশা করিনি। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বোর্ডের বাকি পরিচালক ও বাহিরের কিছু লোকও উপস্থিত ছিল।'
এ সময় তিনি আরও বলেন, 'আমার মনে হয়েছে, বোর্ড পরিচালকদের যে জায়গা দেওয়া দরকার সেটি কতটা বিসিবি প্রেসিডেন্ট দিতে চান, তা স্পষ্ট নয়। আমার কথাটা কিছুটা ভিন্ন হতে পারত। কারণ, আমরা দুজনই নতুন এসেছি। সেখানে আমাদের মধ্যে একসাথে কাজ করার যে ব্যাপারটা, সেখানে এ ধরনের মন্তব্য সমীচীন নয়।'
ফাহিমের কথাতেই স্পষ্ট বোর্ড সভাপতি পরিচালকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন না পাশাপাশি তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়। এমনভাবে চললে বোর্ডের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন বলেও জানান ফাহিম। বলেন, 'আমার অনেক সময় মনে হয় আমি বোর্ডের বাইরে থাকতে পারলেই মনে হয় ভালো হবে। কারণ, আমি বোর্ডের বাইরে থেকে যে ভূমিকা রাখতে পারি বা যে আলাপ-আলোচনা করতে পারি, সেটি এখানে থেকে করা সম্ভব নয়। আমি যদি বোর্ডে থাকি তাহলে আমাকে কাজ করতে দিতে হবে। কাজ না করতে পারলে তার চেয়ে বাইরে থাকাই ভালো। বাইরে থাকলে আমি হয়তো কি হতে পারে না হতে পরে বা কি হওয়া উচিত ছিলো তা নিয়ে আলোচনা করতে পারি। তো বোর্ডে থাকাটা আমার জন্য খুব জরুরী না। আর থেকেও যদি কাজ করার সুযোগ না থাকে, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ না থাকে তাহলে তো হল না। আমার মনে হয়, কাজ করার স্বাধীনতাটা থাকা জরুরি, নিজের চিন্তা ভাবনাটা মেলে ধরার সুযোগ থাকাটা।'
এ দিকে বিসিবি সভাপতি ফারুক এবং পরিচালক ফাহিম দুই জনই অবস্থান করছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে সিলেটে। গতকাল ফাহিম গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা না বললেও এ নিয়ে কথা বলেন সভাপতি। ফারুক জানান সব সমস্যাই আলোচনা করে সমাধান করা যায়। বলেন, 'বিসিবির নতুন বোর্ডে দুই জন নতুন ব্যক্তি এসেছে তার মধ্যে আমি বোর্ড সভাপতি আর একজন পরিচালক আছেন (ফাহিম)। আমি মনে করি আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আর যদি কারো কোনো অসন্তুষ্টি থাকে এটা.. দেখা যায় একটা দল যখন খেলে দলের মধ্যেও যে সবাই সবার খুব কাছের বন্ধু তা কিন্তু হয় না তবে ঐটা (সমস্যা) যাতে বড় না হয় তার আগেই যদি আমরা সমাধান করে ফেলি সেটা ভালো। কারো ভেতরে যদি অসন্তুষ্টি থাকে, সে যদি আমার সঙ্গে যা নিয়ে তার আপত্তি তা নিয়ে আলোচনা করে ফেললে ভালো হয়। অনেক সময় হয়কি... যেহেতু আমি বললাম যে আমরা দুই জনই নতুন পরিচালক বেশির ভাগ কাজ দুই জন মিলেই করার চেষ্টা করেছি সেক্ষেত্রে শেষ দিকে খানিকটা যোগাযোগে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। কেনন অনেক সিদ্ধান্ত আমকে নিতে হয়েছে.. যে বারবার ডাকব সবাইকে আবার নিব (মতামত)। কিছু কিছু জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেক্ষেত্রে কিছু যোগাযোগের দূরত্ব হয়েছে। আজকে আমি আলাপ করেছি (ফাহিমের সঙ্গে)। মনে হয় তার সঙ্গে আমার বিষয়টা সমাধান হয়ে যাবে।'
এক পর্যায়ে বোর্ডে সবার লক্ষ্যই এক জানিয়ে বলেন, 'একটা কথা কি আমাদের সবার লক্ষ্য আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সবার পরিকল্পনায় দেশ আর দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তো ঐটাই যদি মাথায় রাখি তাহলে অন্য সমস্যাগুলো খুব আরামেই সমাধান করে ফেলতে পারব। কারণ সমস্যাগুলো আমাদের ব্যক্তিগত। তো আশা করব এইরকম কোনো কিছু আগামীতে হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও ছোটো। খাটো কিছু সমস্যা থাকতে পারে তবে বড় কিছু না হলে আশা করি সব সমাধান করে ফেলতে পারব।'
যদিও পরে অবশ্য দুই পরিচালককে এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে হোটেল লবিতে। শোনা গিয়েছে তাদের মধ্যে সব মনমালিন্য মিটে গেছে। অবশ্য ফারুক মনে করেন মতের অমিল কোনো ইস্যু না, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, 'টিকিটের চাপ ছিল, প্রেসিডেন্ট বক্সেও একটা ঘটনা ঘটেছে। সব মিলে দিনটা আমার সেরা দিন ছিল না। তখন একটা কথা এসেছে। কার সঙ্গে কী বলেছি, হয়তো আমার মনেও নেই। মতের অমিল খুব স্বাভাবিক। এখানে দোষের কিছু দেখি না। এগুলো আগে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। ফাহিম ভাই আমার বড়, সিনিয়র মানুষ। আমারও সিনিয়র প্লেয়ার। আমার অনেক সিনিয়র। সেদিক বিবেচনা করে উনি হয়ত মনঃক্ষুন্ন হয়েছেন।' তবে সমস্যা আসলেও কি মিটেছে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।