বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিকতা হতে হবে পুরো সত্য, আংশিক নয়। সাদাকে সাদা আর কালকে কাল বলতে হবে। সকল ভয়-ভীতি ও লোভ-লালসার উর্ধে উঠে জাতির সামনে সত্য তুলে ধরতে হবে। যারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস রাখেন না, তাদের জন্য অন্তত সাংবাদিকতা নয়।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে রংপুর টাউন হলে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে তিনি এ বলেন। রংপুর ছাড়াও দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, বগুড়ার সাংবাদিকরা এ সমাবেশে যোগ দেন।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো.শহিদুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সল, পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, পুলিশ সুপার আবু সাইম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর বিভাগের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ প্রমুখ।
সমাবেশের উদ্বোধন করেন ২৪-এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য শামসি আরা জামান কলি।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকের লড়াকু মন, গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকতা আর গণতান্ত্রিক শাসন। কিন্তু এ তিনটিরই বড্ড অভাব রয়েছে। নানা কারণে সাংবাদিকরা এখন সাংবাদিকতাকে স্রেফ পেশা হিসেবে নিয়েছেন, মিশন বা ভিশন হিসেবে নয়। সাংবাদিকতা আসলে কেবল তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনার বিবরণ সংগ্রহের পেশা নয়, এটির ভিত্তি হচ্ছে তথ্য যাচাই করাও।
তিনি বলেন, দু’একটি বাদ দিলে গণমাধ্যম হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। তাই তারা সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করতে পারে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুরক্ষাও দিতে পারে না। বরং অধিকাংশ গণমাধ্যম মালিক রাজনীতি ও ব্যবসার ঢাল হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন। অনেকে যেন-তেনভাবে একটা পত্রিকা বের করে সম্পাদক বনে যাচ্ছেন। ৫০ কপি পত্রিকা বের করে তা বগলে চেপে সচিবালয়ে ঢোকেন। এসব বগল সম্পাদকের দাপটে আসল সম্পাদকরা কোণঠাসা। এসব বগল সম্পাদকরা তথ্য সন্ত্রাসকে পূঁজি করে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিচ্ছে।
সাংবাদিক নেতা বলেন, রাজনৈতিকরা, আমলারা এবং বিজ্ঞাপনদাতারা গণমাধ্যমকে তাদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়। কখনো কখনো এরা গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের জীবনও বিপন্ন করে তোলে। গত ১৫ বছরে ষাটের অধিক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন এসব কারণে। তাই গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকতা খুব দরকার।
বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, বস্তুনিষ্ঠতা মানে হল কোনো ঘটনাকে বা বিষয়কে বাড়িয়ে বা কমিয়ে না বলা। রিপোর্টারের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ যাই থাক কোন, মন্তব্য থাকবে না রিপোর্টে। যাকে নিয়ে বা যার প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের তিনি রিপোর্ট করবেন, তার বক্তব্য অবশ্যই থাকতে হবে। ঘটনা এবং বিষয়ে অনিবার্যভাবে একাধিক পক্ষ থাকে। সবার সাথে কথা বলে রিপোর্ট করতে হবে। এক পক্ষের কথা শুনে অন্য পক্ষকে ঘায়েল করা সাংবাদিকতা নয়। মনে রাখবেন সাংবাদিকদের হতে হবে পক্ষহীন। পক্ষপাতহীনতা মানে সাংবাদিকের কোনো পক্ষে নেই এবং ভারসাম্যপূর্ণভাবে সব পক্ষের কথা তথ্যের মধ্যে দিয়েছেন। ন্যায্যতা মানে দুজনের দাবিই যত ন্যায্যভাবে সম্ভব তুলে ধরা রিপোর্টে। তথ্য সংগ্রহ, প্রতিবেদনের গঠন এবং রিপোর্টারের নিজস্ব বর্ণনা সব কিছু ঘটনার সাথে জড়িতদের অবস্থান থেকে দূর এবং স্বতন্ত্রভাবে করতে হবে।