দেশের তিরন্দাজ রোমান সানা সব সময় আক্ষেপ করতেন, দেশ তাকে কী দিল। দেশকে এত কিছু দিয়েছেন কিন্তু কী পেয়েছেন এই কষ্টটা সব সময় তার মধ্যে কাজ করত। সব সময় মনে হতো তার কিছুই পাওয়া হলো না। রোমান সানা দেশের জন্য করেই গেছেন, দিন শেষে পাওয়ার হিসাব শূন্য। এ সব কথা সবার জানা। রোমান সানার কণ্ঠে আফসোস শোনা যেত, ক্রিকেটে কত কিছু পায় আমরা কিছুই পাই না।'
ধরে নেওয়া হচ্ছে এ সব কারণেই অভিমানে দেশ ছেড়েছেন, স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রোমান সানার সঙ্গে যোগাযোগ কারা চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দিতে চান না। হোয়াটসঅ্যাপে বারবার নক করলে একবার সাড়া দেন। রোমান সানা লিখেছেন 'ভাই আমি কী বলবো, সেটা বলেন। আমার কিছু বলার নাই, তাই কিছু বলব না।'
রোমান সানার আক্ষেপের সঙ্গে এক মত না আর্চারি ফেডারেশনের ট্রেনিং কমিটির আহবায়ক ফারুক ঢালী। দেশকে শুধুই দিয়ে গেছেন। জীবনে কিছুই পাননি। ফেডারেশনের মতে জীবনে যা কিছু পেয়েছেন সবই আর্চারি থেকে পেয়েছেন। ফেডারেশনের প্রশ্ন রোমান সানাকে কে চিনতো। কোথায় ছিলেন। ফেডারেশনই তাকে তুলে এনে রোমান সানা বানিয়েছে। ফারুক ঢালী বলেন, 'রোমান কিছুই পাননি সব সময় এমনটা কেন মনে করতেন তা আমাদের জানা নাই। দেশে অনেক রোমান পড়ে আছে। কিন্তু একজন আর্চার রোমান সানাকে তৈরি করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ফেডারেশনকে। দেশি কোচ, বিদেশি কোচ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা, খেলার আয়োজন করা, সবকিছু দিয়েই তো রোমান সানা হয়েছেন। আপনি দেশের জন্য করবেন। দেশ আপনাকে কী দিল সেটা বড় কথা নয়। এই দেশ আছে বলেই তো আপনি রোমান সানা হতে পেরেছেন।'
তিনি বলেন, 'খেলা চলছে, রোমান খেলবে না। মাঠেই ঘুরছে। এটা কেমন দেখা যায় আপনিই বলুন।' আর্চারি খেলে আনসারে চাকরি পেয়েছেন। ফেডারেশনের হিসাবে রোমানা সানা আর্চারি খেলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাড়ি নির্মাণে হাত দিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলেন, 'রোমান সানা কতবার ইউরোপে খেলতে গিয়েছেন, তার হিসাব আছে? অন্যদের কথা বাদ-ই দিলাম। ৫ বছরের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন, আর অমনি উড়াল দিয়েছেন। এর জন্য আপনাকে তৈরি করা হয়নি। রোমান সানার পারফরম্যান্স শেষ, আগামীতে কোচ হবেন। দেশের জন্য কাজ করবেন। অন্যদেরকে তৈরি করবেন, সেটা না করে দেশ ছেড়ে অভিমানের কথা বলছেন।'
ফেডারেশন থেকে এখন অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। কর্মকর্তাদের হাতে মোবাইল ফোনে দেখা সিসি টিভির ফুটেজ। বিয়ের আগে রোমান সানা কীভাবে আর্চার দিয়া সিদ্দিকীকে চড়-থাপ্পড় মারছেন। ইরাকে গিয়ে এই দুজন বদনাম কামিয়েছেন। থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়াচ্ছিল। ইউরোপেও একই ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন বলে ফেডারেশন কর্তারা জানান। রোমান সানার জীবনে দিয়া আসার আগে অন্য একজন আর্চারের সঙ্গেও নাকি একই ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে ফেডারেশন।
রোমানের কারণে বাংলাদেশ একবার সাসপেন্ড হওয়ার মুখে পড়েছিল। সেখান থেকে রোমানকে বিদপমুক্ত করা হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। দিয়া সিদ্দিকীকে বিয়ে করার পর রোমানকে টঙ্গীতে বাসা ভাড়া নিয়ে দেওয়া হয়। আনসারের লোকজনই বাসা ভাড়া করে দিয়েছেন রাজীব উদ্দিন চপলের টাকায়। সেখানেও দুজনের বিশৃঙ্খলায় বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলে। রোমান-দিয়া চলে গেছেন আনসার কৃর্তপক্ষও জানে না।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল আন্তর্জাতিক ফোরামে রোমানের জন্য হাতে পায়ে ধরতেও কার্পন্য করেননি। সব সময় চেয়েছেন রোমান সানাসহ অন্য সব আর্চার যেন নিরাপদ পরিবেশে থাকে। তাদের অপরাধ, ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশ্যে আনতেন না। কখনো মুখ খুলতেন না। কেন? চপল বলেন, 'খেলোয়াড়রা সব সময় আমার কাছে সন্তানের মতো। আমি ওদেরকে তৈরি করেছি। রোমান সানা যখন নিষিদ্ধ হয় তখন সে নিজেই সেটি সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করে। আমরা কেউ করিনি।'