বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

রহস্যময় মিঠাপানির বিগমাউথ বাফেলো ফিশ, বাঁচে ১০০ বছর

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪৬

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মাছের বেশির ভাগই গড়ে তিন থেকে পাঁচ বছর বেঁচে থাকে। তবে গোল্ডফিশ ২০ বছর এবং কই মাছ ৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। শতবর্ষ বাঁচতে পারে এমন মাছের সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি শতবর্ষ বেঁচে থাকা ‘বিগমাউথ বাফেলো’ নামের নতুন এক প্রজাতির মাছের খোঁজ পেয়েছেন একদল গবেষক। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট মাছের চেয়ে বিগমাউথ বাফেলো মাছের প্রতিরোধক্ষমতা বেশি। আর তাই এসব মাছ শত বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকে। শুধু তা–ই নয়, এসব মাছ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবান হয়। ফলে ৮০-৯০ বছর বয়সে মাছগুলো সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান হয়।

গবেষণার তথ্যমতে, বাফেলো মাছের রং বাদামি থেকে নীলাভ রঙের হয়ে থাকে। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বাফেলো মাছ ১১২ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে বলে জানানো হয়। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে কানাডার সাসকাচোয়ানে একটি ১২৭ বছর বয়সী বিগমাউথ বাফেলো মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিগমাউথ বাফেলো মাছের আরও দুটি প্রজাতি রয়েছে। স্মলমাউথ বাফেলো ও ব্ল্যাক বাফেলোও এক শ বছরেরও বেশি সময় বাঁচতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব অ্যারিজোনার অ্যাপাচি হ্রদে যেসব বিগমাউথ বাফেলো মাছ রয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই বয়স এক শ বছরের বেশি।

‘গ্রিনল্যান্ড হাঙর’ প্রজাতির হাঙর যে কোনো জীবিত মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকে। এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ২৫০ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির মাছ–বিশেষজ্ঞ অ্যালেক ল্যাকম্যান বলেন, ‘বিগমাউথ বাফেলো মাছ নিয়ে আমরা যা ভাবি, তা ভুল। গবেষণার জন্য ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ জুলাই পর্যন্ত অ্যাপাচি লেক থেকে ২২২টি বাফেলো মাছ ধরা হয়। এরপর মাছগুলোর কানের মধ্যে থাকা অটোলিথ নামের পাথর বিশ্লেষণ করেই মূলত বয়স অনুমান করা হয়েছে। ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি পাথরটি মাছকে পানিতে কম্পন শুনতে ও অনুভব করতে সহায়তা করে। প্রতিবছর একটি নতুন স্তর তৈরি হয় পাথরের ওপরে। গাছের কাণ্ডে যেমন প্রতিবছর একটি করে আস্তর দেখা যায় তেমনি পাথরের ওপরেও স্তর তৈরি হয়। অটোলিথ পাথর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অ্যাপাচি লেকের প্রায় ৯০ শতাংশ বাফেলো মাছের বয়সই ৮৫ বছরের বেশি।’

গবেষকেরা তিনটি প্রজাতি স্মলমাউথ বাফেলো, বিগমাউথ বাফেলো ও ব্ল্যাক বাফেলো নিয়ে গবেষণা করেন। হ্রদ থেকে সংগ্রহ করা বাকি ১৯৯টি মাছের বয়স জানতে ক্যাচ-ফটোরিলিজ নামের একটি কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। ছোট কাঁটাযুক্ত বা কাঁটাবিহীন হুক দিয়ে মাছ সংগ্রহ করে তাদের ছবি তোলা হয় এই পদ্ধতিতে। গবেষণা শেষে ১২৯টির মাছকে হ্রদে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গবেষকেরা মাছের ছবিতে থাকা কমলা ও কালো দাগ পর্যালোচনা করেও মাছের বয়স অনুমান করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার জর্জিয়া অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণীর কিউরেটর নাথান ফার্নাউ বলেন, ‘স্টার্জন ও অ্যালিগেটর গারের মতো বড় মাছ নদীতে পাওয়া যায়। যাদের বেশ কয়েকটি প্রজাতি ৫০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। গবেষকেরা এক শ বছরেরও বেশি বয়সী মাছ খুঁজে পেয়েছেন। এর ফলে নতুন অনেক কিছু জানার সুযোগ হবে।’

বিজ্ঞানী ল্যাকম্যান জানিয়েছেন, বিগমাউথ বাফেলো মাছের দীর্ঘায়ু সম্পর্কে আরও জানতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়াই করতে পারে। শুধু তা–ই নয়, বয়স্ক মাছের রক্তে লিম্ফোসাইটের সঙ্গে নিউট্রোফিলের অনুপাত কম পাওয়া গেছে। এসব তথ্যের পাশাপাশি মাছগুলোর চিরযৌবনের রহস্য কী, তা জানতে হবে। এর মাধ্যমে মানুষসহ অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর বেশি দিন বেঁচে থাকার কৌশল আবিষ্কারের জন্য নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

ইত্তেফাক/কেএইচ
 
unib