আগামী এশিয়া কাপ হকির ভাবনা মাথায় রেখে ৫৭ জন খেলোয়াড়ের একটি তালিকা তৈরি করেছে হকি ফেডারেশন। বিস্ময়কর হচ্ছে ৫৭ খেলোয়াড়ের তালিকায় নেই দেশের এক নম্বর খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমির নাম। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তাকে সবার আগে বাদ দিয়েছে ফেডারেশন। কী কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে হকি ফেডারেশনের এডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল মো. রিয়াজুল হাসান (অব.) জানিয়েছেন, তারা তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়তে চাইছেন। বেশি বয়সের খেলোয়াড় নিতে চাইছেন না। ফেডারেশনের চোখে বেশি বয়সের একমাত্র খেলোয়াড় জিমি। তাই তাকে নেওয়া যাবে না।
সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের খেলা ইন্দোনেশিয়ায়। তখন জিমির বয়স কয়েক মাস বেড়ে যাবে। এমন ভাবনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। উদ্ভট চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ঘুরছে দেশের হকি। একজন খেলোয়াড় বিজয় দিবস হকিতেও নিয়মিত খেলেছেন। ক্লাব হকিতে কিংবা নৌবাহিনী দলের কর্মকর্তারা যেখানে জিমিকে সেরা একাদশে খেলাচ্ছেন, সেখানে ফেডারেশন বুঝে গেল বয়সের কারণে জিমি খেলতে পারবে না। জিমির ফিটনেস পরীক্ষা না নিয়েই ফেডারেশন সিদ্ধান্ত দিল জিমি বাদ।
হকি ফেডারেশন থেকে তালিকা বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাবে পাঠানো হয়েছে। সেখানে উল্লেখিত খেলোয়াড়দেরকে ট্রায়ালে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। জিমির নাম নেই। আমন্ত্রণ পাওয়াদের মধ্যে এমন কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন যারা অনেক দিন ধরে খেলার মধ্যেও নেই। রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, তারা তালিকা দেখে নাম পাঠিয়েছেন।'
সিনেমার নায়কের বয়স হয়ে গেলে সে আর নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন না। বাবার চরিত্রে কাজ করেন। খেলাটা সিনেমা বানিয়েছে হকি ফেডারেশন। খেলার মাঠে বয়সটা কি এক জনেরই হয়েছে। আর কারও হয়নি? খেলাটা বয়সের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে পারফরম্যান্সের ওপর। যদি তাই না হতো, তাহলে রজার মিল্লার কীভাবে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলেছিলেন, মেসি, রোনালদো কীভাবে এখনো খেলছেন। পারফরম্যান্স দিয়ে খেলছেন। মেসি-রোনালদোরা এখনো পারফরম্যান্স দিয়ে লড়াই করে টিকে আছেন। রিয়াজুল হাসান বললেন, 'এগুলো একসেপশনাল কেস।'
জিমি যদি দলের সঙ্গে সেরা খেলাটা দিয়ে খেলতে পারেন তাহলে কারো তো সমস্যা না থাকার কথা না। সারা দুনিয়া যেখানে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখে নাম ঘোষণা করে, আর বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন পুরোনো তালিকা দেখে টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কেউ যদি ফিটনেস দিয়ে, পারফরম্যান্স দিয়ে খেলায় টিকে থাকতে পারে তাহলে হকি ফেডারেশনের সমস্যা কোথায়। জিমিকে সেই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও দেয়নি ফেডারেশন। রিয়াজুল হাসান বললেন, 'ও পরীক্ষা দেওয়া সুযোগ পায়নি।'
লিগের খেলা দেখে খেলোয়াড় বাছাই করার সবচেয়ে সহজ সুযোগ। সেটি করেনি ফেডারেশন। রিয়াজুল হাসানের কথায় স্পষ্ট, জিমিকে বাদ দিয়ে নামের তালিকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটি সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্ত নয়। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন কিনা। হকিতে গুঞ্জন রয়েছে, রিয়াজুল হাসানকে ঘিরে একটা বলয় তৈরি হয়েছে, যেখানে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রিয়াজুল হাসান একসময় হকি খেললেও দীর্ঘ দিন হকি থেকে দূরে থাকার কারণে পরনির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর সেই সুযোগে সাধারণ সম্পাদকের কাজে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে রিয়াজুল হাসানের দূরদর্শিতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। আকাশ ভেদ করে দেশের হকি এমন উচ্চতায় উঠে গেল যে, ৫৭ জনের নামের তালিকায় জিমির নাম আসেনি। শুধু জিমি নয়, জিমির ভাই রাকিন একজন ভালো খেলোয়াড়, তাকেও ৫৭ জনের তালিকায় রাখা হয়নি। প্রশ্ন উঠছে-কারা পেছন থেকে হকি ফেডারেশনকে বিতর্কিত করতে চাইছে।