বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

জিমির ভাইকেও বাদ দিয়েছে হকি ফেডারেশন

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:১২

পৃথিবীর খেলার ইতিহাসে বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। বয়স বেশি খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে নেওয়া হবে না। জাতীয় দল গড়তে বয়স বেঁধে দিয়েছে। কারা খেলতে পারবেন খেলোয়াড়দের নামও ফেডারেশন নির্ধারণ করে দিয়েছে। নৌবাহিনীতে ১২ জনের নাম পাঠানো হয়েছে। নৌবাহিনীর খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি সেই তালিকায় নেই। হকি ফেডারেশন প্রথমেই জিমিকে বাদ দিয়েছে। হকি অঙ্গনে এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। 

খেলোয়াড়রা সরাসরি মুখ না খুললেও ভেতরে ভেতরে তারা ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, কয়েক জন সাবেক খেলোয়াড় জিমির পেছনে লেগেছেন। জিমির খেলোয়াড়ি জীবনের জনপ্রিয়তার কাছে তাদের নিজের খেলোয়াড়ি জীবন ক্ষুদ্র হয়ে পড়ায় তারা বিভিন্ন স্থানে জিমিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন বলে গুঞ্জন। ফিটনেস টেস্ট না দিয়ে কীভাবে একজন খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হয় তা নিয়ে দেশের হকি অঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে। জিমিকে খেলতে না দেওয়ার জন্যই বয়স নির্ধারণের উদ্ভট নিয়মের কথা বলছে ফেডারেশন। 

হকি ফেডারেশন সাধারণ লে. কর্নেল মো. রিয়াজুল হাসান (অব.) শনিবার জানিয়েছিলেন, তারা তরুণদের কথা মাথায় রেখে জাতীয় দল গড়তে চান। যদি তাই হয়, তাহলে তরুণ খেলোয়াড় খালেদ মাহমুদ রাকিনকে কেন ডাকা হলো না। ৫৭ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে রাকিনের নাম নেই। ৫৭ জনের মধ্যে দেশের এক নম্বর তারকা রাসেল মাহমুদ জিমির নাম নেই। তরুণ খেলোয়াড়দের স্লোগান তুললেও রাকিনের নামও নেই। গলদটা কোথায়। জিমি এবং রাকিন দুই ভাই। একই পরিবারের দুই সন্তানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই সন্দেহের দানা বাধে।

একবার জাতীয় দলে কোরিয়ান কোচ থাকাকালীন জিমিকে ফিটনেস টেস্ট দিয়ে দলে ঢুকতে হয়েছিল। কোরিয়ান কোচ জিমিকে প্রচুর চাপ দিয়েছিলেন। তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জিমি ফিটনেস টেস্টে টিকে থাকার লড়াই করেছিলেন। কোরিয়ান কোচ জিমিকে যতই চাপ দেন, জিমিও চাপ নিয়ে উতরে যান। বাধ্য হয়ে কোরিয়ান কোচ তাকে মেনে নিলেন। জিমির কাছে কোচ জানতে চাইলেন তুমি কীভাবে পার, আমি তো বার বার তোমাকে ভাঙার চেষ্টা করেছি, তুমি ভেঙে পড় কিনা, দেখতে চেয়েছি । তখন জিমিও সেদিন বলেছিলেন, খেলাটা কেউ খেলে দিতে পারবে না। আমার খেলা আমাকেই খেলতে হবে। টিকতে হলে সবার সঙ্গে লড়াই করতে হবে।' কোরিয়ান কোচ জিমিকে স্যালুট করেছিলেন এবং অন্যদের বলেছিলেন জিমিকে স্যালুট করো। সত্যিই ও জিনিয়াস।'

ফেডারেশন আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি কুপার টেস্টের জন্য ৫৭ খেলোয়াড়কে ডেকেছে। খেলা নেই কীভাবে কুপার টেস্ট করবে ফেডারেশন। লিগের খেলা শুরু হলে সেখান থেকে খেলোয়াড় বাছাই করা এবং কুপার টেস্টের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন খেলোয়াড়রা। হকি ফেডারেশন জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কোনো পারিশ্রমিক দেয় না। সহজ কথায় হকিতে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা পেটে-ভাতে খেলেন। খেলা না থাকলে তারা খেলার মধ্যেও থাকেন না। ফেডারেশন খেলোয়াড়দের আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি। যারা কিছু খেলোয়াড় সার্ভিসেস দলে খেলেন, চাকরি করেন। সেই উসিলায় কিছু পারিশ্রমিক পান। 

কিন্তু সেই সংখ্যাটা কত। খুবই নগণ্য। আর বাকি যেসব খেলোয়াড় রয়েছে তাদের খোঁজ কি ফেডারেশন নিয়েছে কখনো। তাদের ভেবেছিল কি কখনো। তা-ও করেনি। অথচ ঘরের খেয়ে জাতীয় দলের জন্য জীবন দিচ্ছেন যেসব খেলোয়াড়, তাদের জন্য নানা নিয়মের দেওয়াল তৈরি করতে মুখ চেনা কিছু সাবেক খেলোয়াড় ফেডারেশনকে ভুল পথে ঠেলে দিচ্ছে। আর এসব কারণে দেশের হকিটা বার বার উন্নয়নের পথে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

 
unib