দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬ অর্থবছর) দেশে একটি সংস্কারমূলক বাজেট প্রয়োজন হবে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগুলোর অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের একটি সংস্কার-ভিত্তিক বাজেট দরকার। আমরা এর আগে অনেক বড় আকারের বাজেট পেয়েছি, কিন্তু সেখানে সংস্কারের উদ্যোগগুলো দেখা যায়নি। আবারও যদি একই ঘটনা ঘটে, তাহলে বর্তমান সরকারও একই পথে হাঁটছে বলেই মনে হবে তা সবাইকে হতাশ করতে পারে।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ রাজধানীতে নিজ বাসভবনে বাসসকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট একটি অর্থনৈতিক 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে যেখানে সবাই জানতে পারবে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে কি না তা চূড়ান্তভাবে জানার জন্য আমাদের আগামী বাজেটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য আগামী বাজেটে গ্রহণযোগ্য রাজস্ব, আর্থিক ও কাঠামোগত নীতি সংস্কার নিয়ে আসতে হবে। তাদের দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সূচকগুলো কোনো কিছু প্রকাশ করছে না।
বর্তমান ‘অর্থনৈতিক অবস্থা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের পর, অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী শাসনামল থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে অত্যন্ত নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই অবস্থা থেকে অর্থনীতির অবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি অর্জন করা খুবই কঠিন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. জাহিদ বলেন, চলতি অর্থবছরের (অর্থবছর ২৫) জুলাই-আগস্ট মেয়াদে অর্থনীতির চাকা স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। তিনি বলেন, এরপর পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বর্তমান সরকার সার্বিকভাবে অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য খুব বেশি সময় পায়নি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাই দেখেন না, তারা সরকারের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলও খোঁজেন। ‘সেক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বিরাজ করে বা বিনিয়োগের পরিবেশ কালো মেঘে ঢাকা থাকে।
ড. জাহিদ বলেন, ‘সরকারের নীতিতে বিরাট পরিবর্তনের আশা করা বাস্তবসম্মত হবে না, তবে বাজেটে 'আশার আলো' অবশ্যই জ্বলবে।’
আগামী বাজেটের অগ্রাধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামাজিক খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, মূল্যস্ফীতির হার কমলেও তা যথেষ্ট ভালো হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘দরিদ্র ও অসচ্ছলদের জীবনযাত্রার বর্ধিত ব্যয়ের সাথে মোকাবিলা করার জন্য নগদ সহায়তার প্রয়োজন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে অতীতের অবহেলার প্রতিকারের জন্য বাজেটে ব্যবস্থার প্রয়োজন এবং বেশ কয়েকটি মূল খাতে প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠনের জন্য অনিবার্যভাবে সামাজিক ব্যয়ের সংস্থানের প্রয়োজন হবে।’