রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

কাউখালী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

৭ বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণের কাজ অথচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জনবল

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:২১

প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় শেষ হলেও শেষ হয়নি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই ভবন নির্মাণের কাজ। স্থানীয়দের মতে, ঠিকাদারদের উদাসীনতা, অবহেলায় ১৮ মাসের স্থলে ৭ বছরেও শেষ হয়নি ৪০ শতাংশ কাজ। তদারককারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নেই কোন আগ্রহ।

কাউখালীর আপামর জনসাধারনের প্রশ্ন কবে শেষ হবে কাউখালী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাজ? এর উত্তর কেউ দিতে পারছে না। এতে করে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। 

সম্প্রতি এ কলেজের জন্য অধ্যক্ষসহ জনবল নিয়োগ করেছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। যেখানে পাঠদানের ভবনই হয়নি সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সরকারী অর্থের অপচয়। আদৌ কারিগরি শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রহসর এ উপজেলার শিক্ষার্থীরা কারিগরি বিষয়ে কোন শিক্ষা গ্রহন করতে পারবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। 

স্থানীয়দের অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে জানা যায়, ২০১৭ সালে ১৫ কোটি ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ টাকা ব্যয় ধরে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদার নিয়োগ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজটি পায় চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাজির হোসেন অ্যান্ড নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ। কাজ পাওয়ার পর থেকে কাজের ধীরগতি, কাজ বন্ধ থাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, একাধিকবার সময় বাড়ানো এসব চলতে থাকে। 

২০১৭ সালের শেষে দিকে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ২০২৪ সাল শেষ হয়ে ২০২৫ সাল শুরু হলেও কাজ বুঝিয়ে দেওয়াতো দূরের কথা, এ সময়ে ৬০ শতাংশ কাজও করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম কাজ শুরুর কয়েক মাস পর বন্ধ হয়ে যায় ভবণ নির্মানের কাজ, কিন্ত জানতেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৌশলে কাজের দ্বিগুণ টাকা (প্রায় ৩ কোটি টাকা) তুলে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। এর পর কাজ বন্ধ থাকে দুই বছরেরও অধিক সময়। পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাজির হোসেন এন্ড নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজকে খুঁজে বের করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার আব্দুল্লা আল মামুন (সুমন) এর এএইচ এন্টারপ্রাইজকে চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। নতুন ঠিকাদারকে ২০২০ সালের অক্টোবরে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়। উক্ত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরে একটি বিশেষ চিঠিতে ২০২২ ডিসেম্বরের মাধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পর আবারো সময় বাড়ানো হয় ২০২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে  ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাস শুরু হলেও কাজ শেষ হয়নি। 

কাউখালীর কলমপতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমা বলেন, আজ ৭টা বছর হয়ে গেছে এখনো কাজটি শেষ হয়নি। আমাদের উপজেলার পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা আমাদের সাথে একই সময়ে কাজ শুরু করেছে। কাজ শেষ করে গত কয়েকটি শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি করে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের খামখেয়ালীর কারনে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান বেকারত্ব দূর করতে কারিগরি শিক্ষার প্রসার করতে সারা বাংলাদেশে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মান করছে সরকার। আর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও উদাসিনতায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা দ্রুত চাই কলেজের ভবণ কাজ শেষ হোক।

কাজ কেনো বন্ধ সে বিষয়ে জানতে ঠিকাদার এএইচ এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আব্দুল্লা আল মামুনের (সুমন) ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক্ক চাকমার কাছে কাজের অগ্রগতি ও ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনো অনেক কাজ বাকি থাকায় চলিত ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সময় দেওয়া হয়েছে। ১৮ মাসের কাজ ৭ বছরেও শেষ হলোনা কেনো আবার সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে জানান, প্রকল্পের পিডি কার্যালয় থেকে তা করা হয়েছে। 

তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে  জানা গেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের খামখেয়ালী উদাসীনতা এবং ঠিকাদারের সাথে পক্ষপাতিত্বের কারনে কাউখালী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজের এ অবস্থা। 

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী আতিকুর রহমান জানান, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কাউখালী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজ পরিদর্শন করে দেখেছি এ কাজ সম্পাদন করতে আরো এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। তিনি জানান পুরো বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএইচপি
 
unib