শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

রিজার্ভ চুরির মামলা তদন্ত করতে চায় দুদক

এফবিআই বাংলাদেশ ব্যাংকের কারো সংশ্লিষ্টতা পায়নি :আতিউর

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২০

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা (১০১ মিলিয়ন ডলার) লুটের ঘটনা তদন্ত করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে মূলত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে, কিন্তু মামলায় কৌশলে চুরির ধারা দেওয়া হয়। আইনে হ্যাকিংয়ের স্পষ্ট ধারা থাকলেও সেটি মামলায় উল্লেখ করা হয়নি, যাতে অভিযোগপত্র দিলেও মামলাটি বিচারে গিয়ে আসামিরা ছাড় পান। আসামিদের সুবিধা দিতেই এই ধারা যুক্ত করা হয়। যা ছিল হ্যাকিং ও রিজার্ভ লুটের ঘটনায় বড় ধরনের ঘাটতি।

দুদকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সিআইডির কাছে পুরো মামলার ‘কেস-ডকেট’ (ফাইল) চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, দণ্ডবিধির ২১ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের ‘প্রযোজ্য’ ধারায় সরকারি কর্মকর্তা (পাবলিক সার্ভেন্ট) হিসেবে দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধ হিসেবে তদন্ত করার বিষয়ে সিআইডির সহায়তা প্রয়োজন।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মামলার নথি সরবরাহ করতে চান। কারণ এ মামলায় জড়িতদের অপরাধ দুদকের নিজস্ব আইনে তদন্তযোগ্য। দুদক যদি মনে করে, সিআইডির কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যারা এর তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরও সম্পৃক্ত করতে পারে। এছাড়া আইসিটি আইনের ধারা ও মানি লন্ডারিং আইনের ধারার অপরাধ যদি দুদকের তপসিলে তদন্তের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, সেই অংশটুকু সিআইডি তদন্ত করতে পারে।

এরই মধ্যে সিআইডি রিজার্ভ লুটে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রটিকে শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে আতিউর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত ২ জানুয়ারি সিআইডি এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করে দেশের আকাশপথ ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে দেয়। তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের পরিচালক ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক আনিসউদ্দিন আহমেদ খান ওরফে আনিস এ খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার দিপঙ্কর কুমার চৌধুরী, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক এস এম রেজাউল করিম, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা, মামলার বাদী জুবায়ের বিন হুদা, সাবেক উপপরিচালক (সুইফট অপারেটর) জি এম আব্দুল্লাহ সালেহীন, সহকারী পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন, কর্মকর্তা একলাস উদ্দিন ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, সিআইডির বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার তথ্য জানিয়ে যে তালিকা দিয়েছে, সেই তালিকার মধ্যে শুধু ড. আতিউর রহমান (পাসপোর্ট নম্বর-বিও-০০৮৯৯১১) আগেই বিদেশ চলে গেছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি দুবাই চলে যান। এরপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। বাকি কর্মকর্তাদের কেউই ৫ আগস্টের পর বিদেশ ভ্রমণ করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, বৈধ পথে তারা দেশ ছাড়তে পারেননি।

রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. আতিউর রহমান গতকাল শনিবার হোয়াটসঅ্যাপে এই প্রতিবেদককে লিখিতভাবে বলেন, ‘এ নিয়ে নিউ ইয়র্ক কোর্টে মামলা চলছে। প্রাথমিক রায়ে বাংলাদেশ ব‍্যাংক জিতেছে। এফবিআই যে দীর্ঘ তদন্ত করেছে তাতে বাংলাদেশ ব‍্যাংকের কারো সংশ্লিষ্টতা পায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরও বলেছেন, হ‍্যাকড অর্থের একটা অংশ ফেরত এসেছে, নিউ ইয়র্ক কোর্টের মামলায় আমরা জিতব এবং বাকি টাকা ফেরত পাব। তবু আত্মঘাতী বাঙালি নিজেদের মানুষের ওপর দোষ চাপিয়ে টাকাটা ফেরত আনতে বাধা সৃষ্টি করছে। গভর্নর প্রতিদিনের অপারেশন দেখেন না, তিনি কম্পিউটার নিয়ে বসেও ছিলেন না। আর ঘটনাটি ঘটেছে নিউ ইয়র্ক ফেডে। আর সে কারণেই ঐ কোর্ট মামলা নিয়েছে। বাংলাদেশের দোষ থাকলে নিশ্চয় মামলা নিত না।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার (১০১ মিলিয়ন) হ্যাক করে সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার ৩৯ দিন পর ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করে এবিডি শাখার যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৭৯ (চুরির অপরাধ) ধারাসহ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারা এবং ২০০৬ সালের আইসিটি আইনের ৫৪ ধারায় মামলাটি করা হয়।

ইত্তেফাক/এমএএম
 
unib