বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৬

অক্সিজেন সংকটের কারণে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ২০কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে মরছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। চলমান এই ঘটনার ২৫দিন পর সরে জমিনে আসলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি।

২৭জানুয়ারি এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশের পর ৮সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়। 

তদন্ত কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. সোহরাব আলী কে প্রধান করে এবং মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলমগীর কবিরসহ ৮ জনকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। 

বৃহস্পতিবার (৩০জানুয়ারি) দুপুরে তদন্ত কমিটি মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ষাটনল, ষাটনল বাবু বাজার, মোহনপুর ও এখলাছপুর এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান। 

এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মোঃ সোহরাব আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পুরো এলাকাটা আমরা ঘুরে দেখলাম। মেঘনা নদীর তীরবর্তী চারটি স্পট থেকে পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেতে পাঁচ দিন সময় লাগবে। তারপর আমরা মেঘনার এ অঞ্চলের মাছ মরে যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে পারব।

গত কয়েক বছর যাবতই এ অঞ্চলে এভাবে মাছ মরে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানকার নদীর পানির অক্সিজেনের প্রকৃত অবস্থা, কাছাকাছি অঞ্চলে শিল্প কারখানার বর্জ্য সহ বিভিন্ন বিষয়েই আমাদের মাথায় আছে। তবে পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না। 

এদিকে মেঘনা পাড়ের ষটনল মালোপাড়া, বাবু বাজার, ছটাকী, দশীনী, মোহনপুর, হাশিমপুর, এখলাছপুর ও জহিরাবাদ এলাকার নদীর পাড়ের বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, গত ২৪/২৫ দিন ধরেই ভাটার সময় মেঘনা নদীর পাড়ে চেউয়া, পুঁটি, চিংড়ি, পাঙাশ, আইর, কাচকি, বেলেসহ বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। মাছ ছাড়া সেলেং, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপসহ নানা জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠছে।

সম্প্রতি মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে নদীর পানির মান পরীক্ষা করছে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলাফলে দেখা গেছে, মেঘনার পানিতে পিএইচ–এর পরিমাণ কমে এখন ৬ থেকে সাড়ে ৬ পিপিএম–এ দাঁড়িয়েছে। এর স্বাভাবিক পরিমাণ বা নরমাল ভ্যালু সাড়ে ৭ থেকে ৯ পিপিএম। পানিতে অ্যামোনিয়ার স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে শূন্য দশমিক ১ পিপিএম। মেঘনার পানিতে সেটি বেড়ে এখন শূন্য দশমিক ২ পিপিএম বা ততোধিক। পানিতে অক্সিজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ পিপিএম। অতিরিক্ত দূষণের ফলে মেঘনার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ থেকে দেড় পিপিএম–এ। এ কারণে ব্যাপক হারে মাছ মরে যাচ্ছে।

মেঘনা অঞ্চলের জেলে মহাবীর বর্মণ ও প্রদীপ বর্মণ বলেন, গত২৪/২৫দিন ধইরা নদীর পাড়ে  মাছ মরার কারণে আমরা মাছ ধরতে যাইতে পারিনা। ২/৪জন জাউলা জাল লইয়া নদীতে মাছ ধরতে গেলেও কোন মাছ জালে উডেনা, মাছ ছাড়াই ফিরা আইতে অয়। নদীত মাছ না পাইয়া আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাইতাছি।

মেঘনাঞ্চলের জেলে প্রদীপ চন্দ্র, কালাচান জানায়, গত ২২/২৩দিন ধইরা আমরা গাঙ্গ(নদীতে) মাছ ধরতে যাইনা, যাই যাই মাছ পাইনা। সমিতির তিগা (এনজিওর) লোন উডাইয়া নাও-জাল করছি অহন সমিতির কিস্তির টাকা দিতে পাড়ি না। বউ-পোলাপাইন লইয়া অনেক কষ্টে আছি।

মেঘনা পাড়ের ইন্দ্রজিৎ বর্মণ, মহাবীর বর্মণ, প্রদীপ বর্মণ, পরিমল চন্দ্র, গৌরাঙ্গ, সুভাষ বর্মণ’সহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত কেমিক্যালযুক্ত পানি মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে আসায় ছোট-বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষের জীবনমান দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার বলেন, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে যাওয়ায় ব্যাপক হারে মাছ মরছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে মেঘনার মিঠাপানিও দূষিত হয়ে উঠেছে।

ইত্তেফাক/এএইচপি
 
unib