উত্তর খার্তুম শহরে সুদানের সেনা যোদ্ধা ও তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের ‘সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করার খবরে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বেসামরিক নাগরিক বা সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নেওয়াদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটা যুদ্ধাপরাধ।
জাতিসংঘের মতে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। যুদ্ধে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, ২৫ জানুয়ারি এসএএফ এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর থেকে এসএএফ সংশ্লিষ্ট যোদ্ধা ও মিলিশিয়াদের কারণে সাতটি পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ অন্তত ১৮ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি তারা যাচাই করে দেখেছে।
এতে বলা হয়, আল জাইলি তেল শোধনাগারের আশপাশে এসব ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই সুদানের দারফুর বা করদোফান অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দা। মানবাধিকার অফিস খার্তুম উত্তর থেকে আসা আরও বিরক্তিকর অভিযোগের বিষয়টিও তুলে ধরেছে।
বৃহস্পতিবার ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এসএএফ ইউনিফর্ম পরিহিত লোকজন এবং উত্তর খার্তুমের আল বারা বিন মালিক ব্রিগেডের সদস্যরা কথিত আরএসএফ সহযোগীদের নামের দীর্ঘ তালিকা পড়ে শোনাচ্ছেন এবং প্রতিটি নামের পরে ‘জাইলি’ (আরবি অর্থ নিহত) বলছেন।
ভলকার তুর্ক বলেন, এ মাসের শুরুর দিকে আল জাজিরাহ রাজ্যে একই ধরনের ঘটনার পর সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই প্রতিবেদন গভীরভাবে উদ্বেগজনক। তিনি ‘বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের অধীনে বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে জরুরি পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য সংঘাতরত সব পক্ষের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
মানবাধিকার দপ্তর ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ভয়াবহ হুমকি’র মধ্যে আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, তারা একটি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে যেখানে দেখা গেছে, আল বারা বিন মালিক ব্রিগেডের এক সদস্য পূর্ব নীল নদের এল হাজ ইউসিফের বাসিন্দাদের গলাকেটে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি এল-ফাশেরের একটি প্রসূতি হাসপাতালে ড্রোন হামলায় অন্তত ৬৭ জন নিহত ও ১৯ জন আহত হয়। ভলকার তুর্ক বলেন, বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক বস্তুর ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা ঘৃণ্য। এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং এতে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।