ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের পাথর রপ্তানিকারকরা পাথরের রপ্তানি মূল্য না কমানোয় বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা গত ১ ফেব্রুয়ারি হতে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে। এরই জেরে গত চারদিন ধরে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে কোনো রপ্তানি পণ্য নিচ্ছে না। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় সরকারের প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে নির্মাণ কাজ (কনস্ট্রাকশন ওয়ার্ক) কমে যায়। এ সময় তোর্শা ও স্টোন বোল্ডার পাথরের বাজার মূল্য কমে যায়। ওই সময় প্রতি টন পাথর ১০-১২ ডলারে রপ্তানি করতো ভারত ও ভুটানের রপ্তানিকারকরা। এ সময় বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়লে গত বছরের ৪ নভেম্বর ভুটান ও ভারতের পাথর রপ্তানিকারকদেরকে চিঠি দেয় বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে পাথরের রপ্তানি মূল্য প্রতি মেট্রিকটন ভারতের ৭ ডলার এবং ভুটানের ১২ ডলারে নির্ধারণ করে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।
এ ব্যাপারে সে দেশের ব্যবসায়ীরা ও রপ্তানিকারকরা কোনো উত্তর দেয়নি। পরবর্তীতে ভুটানের স্টোন বোল্ডার তোর্শা পাথর প্রতি মেট্রিক টন ১৫ ডলার ও সামসি পাথর ১৪ ডলার এবং ভারতের পাথর বোল্ডার ১০ ডলারে রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে আবারো ওই দুই দেশের পাথর রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনকে চলতি বছরের ৪ ও ১৬ জানুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির কপি ওই দুই দেশের হাইকমিশনেও দেওয়া হয়। এতেও কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি সে দেশের ব্যবসায়ীরা।
পরবর্তীতে ১৯ জানুয়ারি বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে সাধারণ সভা করে অ্যাসোসিয়েশন। এতে পাথরের মূল্য পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সর্বশেষ ২১ জানুয়ারি আবারো চিঠি দেওয়া হয়। এতে ভুটান ও ভারতের পাথর রপ্তানিকারকদের পাথরের মূল্য পুনঃনির্ধারণ না করলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়। ওই দুই দেশের পাথর রপ্তানিকারকরা বেশকিছু দিনেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি বন্ধ রেখেছে।
এ ঘটনার জেরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর হতে কোনো পণ্য নিচ্ছেন না এবং পাঠাচ্ছেনও না। এতে গত তিন দিন ধরে বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কে ভারতে রপ্তানির জন্য গার্মেন্ট বর্জ্য তুলা, সাবান, জুস, বিস্কুট ও পটেটো সামগ্রীর অনন্ত ৫০ টি গাড়ি আটকে রয়েছে। অপরদিকে বিগত দিন গুলোতে প্রতিদিন গড়ে ভারত ও ভুটান থেকে ৩ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। গত চার দিনে ১ হাজার ২ শত পণ্যবাহী গাড়ি আসেনি। এতে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার সরকারি রাজস্ব আদায় হচ্ছেনা।
বুড়িমারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন, ও সাধারণ সম্পাদক এ এস এম নিয়াজ নাহিদ বলেন, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের না জানিয়ে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেন। বুড়িমারী বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যে-সব পণ্য ভারতে রফতানি করা হয় সেগুলো পণ্যও তারা নিচ্ছে না। চ্যাংড়াবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন শুধু পচনশীল পণ্য কমলা রপ্তানি ছাড়া গতকাল রোববার থেকে আর কোনো পণ্য রপ্তানি করছে না।
বুড়িমারী আমদানি-রপ্তারিকারক এসোসিয়েশন সভাপতি আবু রাইয়ান আশয়ারী রছি বলেন, ভারত থেকে যে পাথর আসছে সেগুলো পাথর আমরা ১০ ডলারে আমদানি করছি। এরপরও কোনো কারণ ছাড়াই কেন তারা সমস্ত পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিল তা বুঝে আসে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভুটান থেকে লাইম স্টোন গার্মেন্টস ঝুটসহ অন্য সব পণ্য আসতো সে পণ্যগুলো ভারতীয় রপ্তানিকারকরা তাদেরকে জিম্মি করে গায়ের জোরে বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সীমান্তের ওপারে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধায় প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে।
অন্যদিকে, আমাদের রপ্তানি করা পণ্য ভারত না নেওয়ায় বুড়িমারী বন্দরের রাস্তায় প্রায় ৩০ থেকে ৫০ পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। গত চার দিনে ভারত ও ভুটানের বোল্ডার পাথরসহ গতকাল রোববার থেকে পচনশীল পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ না করায় গত চার দিনে অন্তত দেড় কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
বুড়িমারী স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মাসউদুর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।