ভারত ৫০ শতাংশ রফতানি শুল্ক বৃদ্ধি করার পর পাকিস্তান থেকে মোংলা বন্দরে প্রথম বারের মতো আমদানি করা হলো চিটাগুড় (মোলাসিস মিঠাই)। প্রায় ২০ বছর পর বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মোংলা বন্দরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি পণ্য নিয়ে পানামা পতাকাবাহী ‘এমটি ডলভফিন-১৯’ নামের বাণিজ্যিক জাহাজ।
পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে ৫ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চিটাগুর পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে এসে নোঙর করে জাহাজটি, যা খালাস করতে সময় লাগবে দুদিন। পরে পুনরায় বন্দর ত্যাগ করবে বিদেশি এ জাহাজ।
আমাদনিকারক প্রতিষ্ঠান ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর দিয়ে এই প্রথম চিটাগুর আমদানি করছে মেসার্স পি অ্যান্ড পি ট্রেডিং লি. নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। ভারতে ৫০ শতাংশ রফতানি শুল্ক বৃদ্ধি করার ফলে ব্যবসায়ীক মূল্যে সমস্য দেখা দেয়। ফলে বিকল্প ও সহজলভ্য হিসেবে এবার পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যার প্রথম চালান নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মোংলা সমুদ্র বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ এমটি ডলফিন-১৯ নামের বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ।
জাহাজটি গত ২২ জানুয়ারি পাকিস্তানের করাচি বন্দর ছেড়ে আসে। খালাস হওয়া এ চিটাগুড় মোংলা বন্দর থেকে রেল পথে নেয়া হবে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে। সেখান থেকে তা দেশের বিভিন্ন ফিড কোম্পানিতে সরবরাহ করা হবে। আমদানি করা পণ্য ভারতের চেয়ে পানিস্তানে ক্রয়মূল্য সাশ্রয় হওয়ায় এখন থেকে পাকিস্তান থেকেই আমাদনি করা হবে এবং তা মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস করা হবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক যাত্র শুরু হওয়ায় বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেন, নাবিক, আমদানিকারক ও শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর জেটিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শফিকুল ইসলাম সরকার, উপ-সচিব মাকরুজ্জামানসহ অন্যান্যরা কর্মকর্তারা।
আমদানিকারক মেসার্স পি অ্যান্ড পি ট্রেডিং লি.- এর স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ারুল হক বলেন, মোংলা বন্দরে কোনো জাহাজ জট নেই। ভারত আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় পাকিস্তান থেকে প্রথম চিটাগুড় আমদানি শুরু করা হয়েছে। যদি ভারত সরকার শুল্ক কমায়, তাহলে পুনরায় ব্যবসা করা যায় কিনা তা দেখা যাবে। তবে আপাতত যে মূল্যে পাকিস্তান পণ্য দিচ্ছে, তাতে প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি লাভ হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের (মেম্বার হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, নতুন পণ্য চিটাগুর আমদানি হওয়ায় মোংলা বন্দরের সক্ষমতা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো।
পূর্বের তথ্যানুযায়ী তিনি বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রথম ৭ মাসে মোংলা বন্দরে ৪৯৬টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। এর মধ্যে ২৩টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকে ১২ হাজার ৮৩ টিইইউজ কন্টেইনার লোডিং-আনলোডিং এবং ১২টি গাড়ির জাহাজ থেকে ৬ হাজার ৭৫১ ইউনিট রিকন্ডিশন গাড়ি খালাস করা হয়। ২০২৫ সালের শুরুতে মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মোংলা বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এ বন্দর দিয়ে ৭৬টি বিদেশি জাহাজ এসেছিল, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বেড়ে ৮৩টিতে উন্নিত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ি, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাকড়া, ক্লে টাইলস, রেশমি কাপড় ও জেনারেল কার্গো রফতানির মাধ্যমে দেশের চলমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। ফলে জাহাজ বাড়বে, কর্মস্থান বাড়বে, বাড়বে বন্দরের রাজস্বও।
২০২২ সালের ২৮ জুলাই প্রথম গার্মেন্টস পণ্য রফতানি ও ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম হিমায়িত ফল (আপেল) আমদানি হয় মোংলা বন্দর দিয়ে।