বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

বিপিএল ফাইনাল 

মিঠুনের প্রথম, নাকি তামিমের দ্বিতীয় 

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩১

অধিনায়ক হিসেবে দশম বিপিএলে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিলেন তামিম ইকবাল। এর আগে খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জিতলেও নেতৃত্ব দিয়ে গেল বারই প্রথম জিতেছিলেন। এবারও তার দল ফরচুন বরিশাল টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতার হাতছোঁয়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। অধিনায়ক হিসেবেও তামিমের অপেক্ষা পরপর দুই বার বিপিএলের সর্বোচ্চ পুরস্কার হাতে তোলার। 

এর আগে মাশরাফি ও ইমরুল কায়েস বাদে অধিনায়ক হিসেবে পরপর দুইবার শিরোপ হাতে ভুলতে পারেননি কেউই। এবার তামিম সফল হলে মাশরাফি ও কায়েসের পরে তামিমের নাম বিপিএল পরিসংখ্যানে জোড়া শিরোপাজয়ী অধিনায়ক হিসেবে লেখা থাকবে। এ দিকে মোহাম্মদ মিঠুন বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে কখনো নেতৃত্ব দেননি তার হাতে একবার শিরোপা উঠলেও অধিনায়ক হিসেবে এবারই প্রথম বিপিএলের ফাইনালে খেলছেন। 

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একাদশ বিপিএলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংস। ২০১৩ সালে প্রথম বারের মতো বিপিএলের ফাইনালে খেলেছিল চিটাগং কিংস। সেটিই ছিল শেষবারের মতো। এরপরে বন্দর নগরীর ফ্রাঞ্চাইজিটির নামে বদল এসেছে বেশ কয়েক বার। তবে কখনো কেউ ফাইনালে উঠতে পারেনি। 

একাদশ বিপিএলে দলটি আবারও চিটাগং কিংস নামে ফিরে আসে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিপিএলের পরে এটি তাদের তৃতীয় বিপিএল। তিন আসরে খেলতে নেমে কিংস বাহিনী দ্বিতীয় বারের মতো ফাইনালে উঠেছে। ২০১৩ সালে কিংসদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এবার সেই দায়িত্ব সামলাবেন মিঠুন। আর রিয়াদ এবারও ফাইনালে খেলছেন, তবে চিটাগং কিংসের প্রতিপক্ষ বরিশালের হয়ে। 

বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়ে গেল আসরে শিরোপা জিতিয়েছিলেন তামিম। তার ব্যাট থেকে এসেছিল আসরের সর্বোচ্চ ৪৯২ রান। এবার তার ব্যাট সেভাবে জ্বলে ওঠেনি। তবু রয়েছেন সেরা ১০ রান সংগ্রহকের তালিকায়। কিন্তু তার নেতৃত্ব এবারও নজর কেড়েছে। গেলবার এলিমিনেটর ম্যাচ খেলে ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেয়েছিলেন তিনি। এবার তো প্রতাপের সঙ্গে টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবে নকআউটেও তার ছাপ রেখেছে বরিশাল। পুরো দলকে চান্সা করে রেখেছেন তামিম। 

গতকাল মিরপুরে অনুশীলনকালীন দাউদ মালান, জিমি নিশামদের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে তামিমকে। আজ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তিনি শান্ত থাকতে চান। তার মতে, 'যে দল বেশি শান্ত থাকবে, সে দলেরই জেতার সুযোগ বেশি। কোয়ালিফাইয়ের ম্যাচগুলোতে এবার আমি বেশি চাপে ছিলাম। সাধারণত ফাইনাল নিয়ে আমি বেশি কিছু ভাবি না।' শান্ত থেকে আজকের দিনটি সাধারণ ম্যাচ হিসেবেই খেলতে চান তামিম। 

এ দিকে দীর্ঘদিন পরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে চিটাগং কিংস ফিরে এলেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে অনেক। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ইস্যুতে দলটির মালিক বেফাঁস মন্তব্য করেছেন। ক্রিকেটার পারভেজ হোসেন ইমনের টাকা পরিশোধ নিয়ে চিটাগংয়ের মালিক বলেছিলেন, 'আমার টাকা কি গাছে ধরে?' এছাড়াও দলটির হোস্ট ও কানাডিয়ান মডেল ইয়াশা সাগরকে নিয়েও চলছে চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা। সবকিছু ছাপিয়ে মিঠুনের নেতৃত্বে তারা ঠিকই পৌঁছে গেছে ফাইনালে। এবার তাদের নজর শিরোপা জয়ে। 

এই যাত্রায় স্থানীয় খেলোয়াড়দের ওপরেই মূল ভরসা রাখা হচ্ছে বলে গতকাল জানিয়েছেন চিটাগংয়ের সহকারী কোচ এনামুল হক জুনিয়র। ফাইনালে তোলার পেছনে যে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন, সেই আলিস আল ইসলামের খেলা নিয়েও রয়েছে সংশয়। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে পাওয়া চোটে ভুগছেন এই রহস্যময়ী বোলার। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে তাকে মাঠে নামাবে দলটি ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মিঠুনের। সেবার বরিশাল বার্নার্সের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। তবে তার দল হেরেছিল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে। 

২০১৭ সালে আবারও ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল মিঠুনের। সেবার তার দল রংপুর রাইডার্স শিরোপাও জিতেছিল। রংপুরের নেতৃত্বে ছিলেন মাশরাফি। এবার নিজেই নেতৃত্ব দিবেন ফাইনালে। মিঠুনের এটি তৃতীয় বিপিএল ফাইনাল। এ দিকে তামিম ইকবালেরও তাই। ২০১৯ সালে নায়ক হিসেবে হাজির হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন তামিম। তবে তিনি নেতৃত্বে ছিলেন না, সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইমরুল কায়েস। সেবার ৬১ বলে ১৪১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। এরপরে গেল বছর বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জিতিয়েছিলেন তিনি। এবারও সেই দলের হাল তার হাতে। 

তামিম-মিঠুন দুই জনেই তৃতীয়বারের মতো বিপিএলের ফাইনালে আজ খেলবেন। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তামিম কখনো হারেননি। এর আগে দুই বার (২০১৯ ও ২০২৪) ফাইনালে নেমে দুই বারই শিরোপা জিতেছেন। আজও সেই ধারা অব্যাহত থাকে কিনা, সেটিই এখন সময়ের অপেক্ষা। ২০১২ সালের ফাইনালে ব্যর্থ হওয়া মিঠুন ২০১৭সালে শিরোপার মুখ দেখেছিলেন। এবার অধিনায়ক হয়ে প্রথম বারের মতো সেই শিরোপা হাতে তুলতে পারেন কিনা, সেটিও ঐ সময়ের অপেক্ষা।

ইত্তেফাক/জেডএইচ
 
unib